AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

‘এমবিবিএস ভর্তি বাড়তি ফি’ গরিব-মধ্যবিত্তের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বাধা


Ekushey Sangbad
মুহাম্দ আসাদ
০১:৪৬ পিএম, ৫ মার্চ, ২০২৩
‘এমবিবিএস ভর্তি বাড়তি ফি’ গরিব-মধ্যবিত্তের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বাধা

ঢাকা মহানগর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সামিয়া সুরমি ছোয়া। এসএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছেন। বাবাকে হারিয়েছেন ৬ বছর বয়সে। সামিয়ার ও তার মা-বাবার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা ও ফুফার সাহায্যে লেখাপড়া করা এই মেধাবী ছাত্রীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন এখন ফিকে হতে চলেছে।

 

এবিষয়ে রোববার (৫ মার্চ) সামিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ৩ বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। মা বাসায় দর্জি কাজ করে সংসার চালান। আমি যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি তখন আমার বাবা মারা যান। মায়ের স্বপ আমি বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করব। আমি আমার মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে চাই। সেই স্বপ্ন পূরণে মা ও ফুফা আমাকে সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। আমার স্বপ্ন পূরণে তারা আমাকে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি করেছেন। আমি চেষ্টা করছি। জানিনা কতটা পারব। মা ও ফুফা বলেছেন, সরকারি মেডিক্যালে চান্স পেলে ভালো। তা না হলে কষ্ট করে হলেও প্রাইভেট মেডিকেলে পড়াবেন। তবে নিউজে দেখলাম প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির ফি কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে আমার মনে হয়, প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়া আমিসহ অন্যদের জন্য নয়। সম্প্রতি সরকার প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির ফি কয়েকগুণ বাড়ানোর পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা বন্ধ করে দিয়েছি।

 

শুধু সামিয়া একা নন তার মতো গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের কাছে প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি এখন শুধুই স্বপ্ন।

 

পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা সামিয়ার মা আলেয়া খাতুন এ প্রতিবেদককে বলেন, সামিয়া ছোটবেলায় বলত বড় হয়ে ডাক্তার হব। আমরা প্রতিনিয়ত সাহস জুুগিয়েছি। আর্থিক সংকটের কারণে সামিয়া তার ফুফার বাসায় থেকে পড়াশুনা করছে। আমরা উৎসাহ দিয়ে গেছি। সরকারি মেডিক্যালে চান্স না পেয়ে বেসরকারি মেডিক্যালে চান্স পেলে ওর পড়াশোনা চালাতে আমরা পারবোনা। ওর পড়াশোনা বন্ধ করা ছাড়া আমাদের আর উপায় নেই।

 

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা ৪৩৫০টি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা ৬১১০টি। সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ১০৪৬০টি। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি সুযোগ না পেয়ে এমবিবিএস ও বিডিএসে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ছে। খরচ জোগাতে অভিভাবকরা হিমশিম খাচ্ছেন।

 

আসন্ন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে যারা ভর্তি হবেন তাদের  খরচর কয়েকগুন বেড়েছে। গত  ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-২ শাখার উপসচিব মাহবুবা বিলকিস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির ফি ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, এমবিবিএস এবং বিডিএস শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক টিউশন ফি ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার এবং টিউশন ফি ১০ হাজার টাকা করে ৪ বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আগের শিক্ষাবর্ষের মতো  রাখা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

 

ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুহাম্মদ আতইয়াব। রাজধানীর ফামর্গেটে একটি কোচিং সেন্টারে ক্লাস করছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ এমন ফি বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। সরকারি মেডিক্যালে চান্স না পেলে বেসরকারিতে পড়তে হবে। তবে ফি বৃদ্ধিতে আমাদের মধ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের পড়া হবে কষ্টসাধ্য।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভর্তি ফি বাড়ানোয় মেডিকেল শিক্ষা সংকুচিত হবে। চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ থেকে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন। শিক্ষার মানোন্নয়ন নয়, ব্যবসায়িক স্বার্থে বাড়ানো হয়েছে মেডিক্যালে ভর্তি ফি। অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই  এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ সংকুচিত হবে।

 

এবিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে সহনশীল পর্যায়ে রেখে বাড়ানো হয়েছে মেডিক্যালে ভর্তি ফি।

 

এবিষয়ে একাধিক অভিভাবক বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে বাজারে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ বিদ্যুতেরর দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি মেডিক্যাল ভর্তি ফি বাড়ানো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।

 

এবিষয়ে পপুলার মেডিকেলে কলেজের  অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, সররকারের এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমবে কিনা এখনই বলা যাবে না। এবার শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার দেখে তা বোঝা যাবে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য  বেসরাকরি মেডিকেল কলেজগুলোতেও কোটা আছে। বৃত্তির ব্যবস্থাও আছে। যারা দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের বিষয়টি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।

 

এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া বলেন, বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তি ফি সহনশীল পর্যায়েই রাখা হয়েছে। তবে এ সেশনের শিক্ষার্থী ভর্তি শেষ হলে প্রভাব কেমন পড়বে তা বোঝা যাবে।

 

বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খান বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম অর্থে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আর এ কারণেই বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে মেডিকেলে পড়তে আসেন। নেপালে বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার জন্য গুণতে হয় ৫০ লাখ, ভুটানে ৫৫ লাখ, মালয়েশিয়ায় ৮০ লাখ টাকা। আর ভারতে এ ফি দেড় কোটি টাকা।

 

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের সাবেক সিনিয়র উপদেষ্টা ডা. মোজাহারুল হক এ বিষয়ে বলেন, মেডিকেলে ফি বৃদ্ধি মেডিকেল শিক্ষায় নীতিবাচক প্রভাব ফেরবে। সব শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাবে না। মেডিকেলে ভর্তি ফি বৃদ্ধির একটি নীতিমালা তৈরি করা উচিৎ ছিল। বেসরকারি মেডিক্যালে বিদেশি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি  ধনীদের  সন্তানরা লেখাপড়া করে। বেসরকারি মেডিক্যাল মালিকদের বেশি বেশি সুযোগ দিতে এসিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেলে শিক্ষার খরচ সহনীয় হলেও বেসরকারিতে খরচ আকাশচুম্বী। বেসরকারি মেডিকেল যতটা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ব্যবসায়িক মনোভাব রয়েছে। ফলে চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবার মান অন্য সব দেশের চেয়ে সবচেয়ে নিচে। চিকিৎসা নিতে অসংখ্য মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে। দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। ভর্তি ফি বাড়ানোয় চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হবে।

 

মেডিকেলে পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণ ৬ মার্চ ও ৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে। আগামী ১০ মার্চ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!