কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকার উত্তরপ্রান্তে প্যারাবন ধ্বংস করে ২ একরের বেশি সরকারী জায়গা দখলে নিয়েছে বদরমোকাম এলাকার জসিম নামের এক কথিত নেতা। এই ঘটনার প্রায় দেড় মাস আগেও কস্তুরাঘাটের মুখে ১ একর সরকারী জায়গা দখল করেছেন তিনি। সেখানেও প্রচুর গাছ কেটে রাতারাতি মাটি ভরাট করে প্লট আকারে গন্ডা প্রতি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার ও রবিবার প্রায় ৪ একর জমির প্যারবন, কেওড়া ও বাইন গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা হিসেব করে দিনে ও রাতে অবৈধ দখলীয় জায়গাটিতে গাছ কাটার মহাযজ্ঞ চলছে। এই প্যারাবন নিধনে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক। তারা দিনের বেলায় এসব গাছ কাটে এবং রাতের বেলায় জোয়ারের পানিতে এসব ভাঁসিয়ে দেয়। এসব কাজ নির্বিঘ্নে করতে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক রাত জেগে লাঠিসোটা নিয়ে পাহারা দেয়। নিয়মিত বেতন ছাড়াও দখল সম্পন্ন হলে তাদের কিছু দখলীয় জায়গা দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঐ নেতা।
সুত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে জায়গা দখল-বেদখল নিয়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরে এক আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যস্থতায় দফা-রফা হয়েছে। দখল শেষ হলে বৈঠকের মাধ্যমে আপোষ-মীমাংসা হবে বলে জানা গেছে। তবে যেকোন মুহুর্তে নদীর জমি দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
অন্যদিকে, জসিমের পাশে ১ একর জায়গায় প্যারাবন কেটে ভরাট করছে শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা আবদুল মালেক ইমন। তিনি সেখানে টিনসেট ঘরও তৈরি করেছেন। তিনি জানান, এটি সরকারী জায়গা নয়। আমার জায়গাটি বৈধ ও রেজিষ্ট্রিকৃত। আমার নামীয় খতিয়ানও আছে। সরকারকে খাজনা দিয়ে কিনেছি। আর যারা সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করছে, প্যারাবন ও বাইনগাছ কাটছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে তিনিও দাবী জানান।
অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন জানান, কস্তুরাঘাট এলাকার অধিকাংশ জায়গা আমাদের। এগুলো আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। দীর্ঘ দিন ধরে দখলে আছি। এসব জায়গা খতিয়ানভুক্ত এবং আরএস, বিএস খতিয়ানও আছে। এগুলো কোনভাবে সরকারী জায়গা বা খাস জায়গা হতে পারে না। চাইলে কাগজপত্র দেখাতে পারি। কেউ খাস জায়গা বললেতো আর মুখ বন্ধ রাখতে পারি না।
প্যরাবন নিধন করে বাঁকখালী নদীর তীর দখলের ঘটনাস্থল সোমবার (২৩ জানুয়ারি) পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) জিল্লুর রহমান এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা। প্যারাবন কেটে সরকারী জায়গা অবৈধভাবে দখলকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে দখল উচ্ছেদ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন ইউএনও।
স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরী। যারা এসব প্যারাবন ধ্বংস করে ভুমি দখলে নিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তারা।
একুশে সংবাদ/শা.হো.প্রতি/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :