AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মেট্রোরেলের সঙ্গেই উন্মোচিত হলো স্মার্ট বাংলাদেশের ফলক


Ekushey Sangbad
লীনা পারভীন
০২:১৮ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
মেট্রোরেলের সঙ্গেই উন্মোচিত হলো স্মার্ট বাংলাদেশের ফলক

মেট্রোরেলের প্রথম বাটন প্রেসের মাধ্যমে শুরু হলো আরেক ‘নতুন বাংলাদেশের যাত্রা’। এ যাত্রার যেন আর পেছন ফেরার উপায় নেই। মেট্রোরেলের চালক হয়তো কেউ থাকবেন কিন্তু এই যাত্রার মাধ্যে যে প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলো সেই চালকের নাম হচ্ছে শেখ হাসিনা। তিনি- আজ কেবল নিজেকেই নয়, বাংলাদেশকেও নিয়ে গেলেন অন্য এক মাত্রায়।

 

সে মাত্রা আমরা বুঝতে পারছি কি না জানিনা, তবে এ এক অবিষ্মরণীয় মুহূর্ত। এ এক অন্য যাত্রার শুরু। আজকের দিনে যে শিশু জন্ম নেবে সে একদিন গর্ব করে বলতে পারবে আমার জন্মের দিনেই আমার দেশে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে জন্ম নেয়া শিশুরা একদিন হয়তো জানতেও পারবেনা কী অসহনীয় ট্রাফিকে কেটে গেছে তাদের পূর্বসূরীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো। কত মানসিক যন্ত্রনায় কেটে গেছে তারই পিতার অফিস যাওয়ার সময়। কত যে, মানুষের মুমূর্ষু সময়ে কেটেছে। কত অসহায় মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে হাসপাতালে সময়মত পৌঁছাতে না পেরে। একদিন এর সবই ইতিহাস হয়ে যাবে।

 

আমি প্রথমবার যখন মালয়েশিয়াতে যাই তখন একটা রেলগাড়িতে উঠলাম। সঙ্গে থাকা বন্ধুটি আমাকে হাত ধরেই উঠালো ট্রেনে। বাহ!! কী চমৎকার রেলগাড়ি। পেছন পেছন দৌড়াতে হয়না।  পানের পিক ফেলার দাগ নেই। সিট কাটা নেই। কেমন চেয়ারের মত আরামদায়ক। ফাঁকা ফাঁকা কামরা। ভাবছিলাম এ কেমন রেলগাড়ি? আমাদের দেশেতো বেলগাড়ীতে লোকের কোলে লোক বসে থাকে। টিটি আসে টিকিট চেক করতে। রেলগাড়ির চেহারাও থাকে কুৎসিত আর নোংরা। এতো পরিষ্কার কেন হবে? কী তাজ্জব, এই রেলগাড়ীতে কোন চেকার আসেনা। অটোমেটিক দরজা খুলে যায়, মানুষ নিজের নিয়মে নেমে যায়। কোন ধাক্কাধাক্কি করা লাগেনা। জেনেছিলাম এর নাম মেট্রোরেল আর এই রেল সব উন্নত দেশেই আছে। এই ট্রেনের গতি অনেক বেশি আর নির্ঝঞ্ঝাটভাবে পৌঁছে যাওয়া যায় নিজ গন্তব্যে।

 

আসলে জীবনে প্রথম এমন রেলগাড়ীতে উঠে ভাবছিলাম এগুলোতো সিনেমাতে দেখতাম। আমি হিন্দি সিনেমার পাগল দর্শক ছিলাম। তাই সেইসব সিনেমাতেই দেখতাম নায়ক নায়িকা এমন অটোমেটিক চলতে থাকা রেলগাড়িতে উঠতো।

 

অবাক বিষ্ময় কাটছেনা এইটা ভেবে যে সেই সিনেমার রেলগাড়ি এখন আমার দেশেই বাস্তবে চলবে। এটাও হবার কথা ছিলো নাকি? আরে বাংলাদেশকে তো কেউই চিনতোইনা! অনলাইন জগতে যখন প্রথম ইয়াহু চ্যাটের অপশন ছিলো তখন প্রচুর বিদেশি বন্ধু হতো যারা দেশের নাম জিজ্ঞেস করলেই চেনাতে কষ্ট হতো। সবাই জানতে চাইতো ইন্ডিয়ার আশেপাশে কিনা।

 

খুব রাগ হতো আবার কষ্টও পেতাম যে আমার দেশকে কেউ চিনছেনা। চিনবেইবা কেন? কী ছিলো আমার দেশের? কিছুইনা। অনেক বছর আগে আমার জন্মেরও আগে একজন লোক ছিলো যাকে চিনেছিলো বিশ্বের অনেকেই। তিনিই ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে তাদের প্রায় সবাই ছিলো ইতিহাসবিদ বা রাজনীতিবিদ। সাধারণ মানুষের কাছে বাংলাদেশ নামটা অপরিচিতই থেকে গিয়েছিলো।

 

কিন্তু এই ২০২২ সালে এসে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বিশ্বের এমন কোন দেশ নাই, এমন কোন মানুষ নাই যে বাংলাদেশকে একনামে চিনেনা। আর কেউ জিজ্ঞেস করবেনা বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার কোন এরিয়া কিনা? এটা আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েই বলতে পারি। গর্ব হয় আমি একজন বাংলাদেশি আর আমার নেতা একজন শেখ হাসিনা। তিনই আমাকে আমার জীবদ্দশায় সিনেমার মত মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ করে দিয়েছন। হ্যাঁ। এটা ঠিক যে মেট্রোরেল পুরোপুরি শুরু হতে আরো কিছু সময় লাগবে কিন্তু শুরুতো হলো। মিরপুরের লোকেরা জানবে কতটা কষ্ট তারা করেছে এতোগুলো বছর ধরে। মিরপুরে যেতেই ভয় লাগতো কেবল জানজটের জন্য। এখন সেই মিরপুর সবার আগে আধুনিক।

 

যেকোন দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান একটি শর্ত হচ্ছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ – ২০৪১’ এর রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। এই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চারটি ভিত্তি নির্ধারন করে দিয়েছেন তিনই। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্মার্ট মানেই প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান। যে কাজ আগে হাতে হতো সেটা এখন থেকে হবে প্রযুক্তির মাধ্যেম। এই যে মেট্রোরেল চলবে এর চালক হয়তো হবে একজন মানুষ কিন্তু সেটা কন্ট্রোল হবে পুরোপুরি প্রযুক্তির মাধ্যমেই।

 

মেট্রোরেলের দুইজন চালকের পরিচয় এরমধ্যেই জানা গেছে। দুইজনেই নারী। যারা বাংলাদেশের নারীদেরকে নিয়ে হতাশ হয়ে যায়, যারা ভাবে বাংলাদেশের নারীরা কি পিছিয়ে পড়ছে সেইসব হতাশাবাদীদের জন্য এই মেট্রোরেল নিয়ে এসেছে এক অন্যন্য বার্তা। আমাদের নারীরা কোনদিকেই পিছিয়ে নেই। খেলার মাঠ থেকে বিমান সবজায়গাতেই বিচরণ করে এসেছে তারা।

 

প্রথমবারের মত সড়কেও নাম লেখালো নারীরা। মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ আমাদের অগ্রগতিকে কোনোদিক দিয়েই ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। নারীরা অদম্য। নারীর চোখ দিয়েই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আর তার অন্যতম কান্ডারী আমাদের বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা।

 

আজকের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে স্মরণ করতেই হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানী বন্ধুদের কথা। তারা মেট্রোরেলের কাজেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। অথচ ভাগ্যের নির্মমতা এই যে তারাও রেহাই পায়নি জঙ্গি আক্রমণের হাত থেকে।

 

অনেক কথাই যেন ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। জীবদ্দশায় নিজের দেশে মেট্রোরেলের গতি দেখে যেতে পারছি এ যেন কল্পনারও অতীত একটি বিষয়।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!