আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, বাঙালির প্রেম, দ্রোহ, সাম্য ও জাতীয় চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। সময়ের বহু পাঁজর ভেঙে আজও বাংলার সব সংকটে, বৈষম্যের প্রতিরোধে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর সৃষ্টি হয়ে ওঠে পথের দিশা। দ্রোহ আর প্রেমে মিশে যাওয়া নজরুলের কবিতা, গান ও চিন্তা কেবল সাহিত্যের নয়, এক অনিবার্য সামাজিক উচ্চারণও।
বঞ্চনার ছায়ায় শূন্য হাতে ঘুরে বেড়ানো মানুষটির বুকভরা ছিল অসীম সৃষ্টির পিপাসা। বিদ্রোহ আর প্রেম, মানবতা আর নারীমুক্তির সংগ্রামে তিনি একাই রচনা করেছেন বিপ্লবের গান, সমাজের চেতনাকে নাড়িয়ে দিয়েছেন কথার শক্তিতে। অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্বাক মানুষের কাঁধে যেন আজও হাত রাখেন তিনি—এক অদৃশ্য ছায়ার মতো। সংকট যত ঘনীভূত হয়, ততই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তারই রচিত সাম্যের সেতু।
নজরুলের সাহিত্যজীবনের মূলমন্ত্র ছিল ‘মানুষ’। সমাজের কল্যাণ বলতে তিনি বুঝেছেন মানবকল্যাণকে, শ্রেণি-বৈষম্যের পাশাপাশি নারীর প্রতি শতাব্দীর অন্যায় দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধেও তুলেছেন সাহসী কণ্ঠ। নারীকে তিনি দেখেছেন কেবল প্রেম ও মায়ার প্রতীক হিসেবে নয়, বরং সংগ্রামের একজন সক্রিয় সঙ্গী হিসেবে।
একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও দার্শনিক—নজরুল বাংলা সাহিত্যে এক বহুমাত্রিক বিস্ময়। কৈশোরে মুয়াজ্জিনের কাজ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদান এবং শেষে সাহিত্য ও সংস্কৃতির মঞ্চে বিপ্লবী উচ্চারণ—তাঁর জীবনের পথ ছিল বৈচিত্র্যময়। ১৯২১ সালের কুমিল্লা সফরে রচিত তাঁর বিখ্যাত দুটি সৃষ্টি—‘বিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙার গান’ বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন গতিপথ দেয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে নজরুলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের ২৪ মে তাঁকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট এবং ১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। একই বছর ২৯ আগস্ট পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নজরুল আজ কেবল ইতিহাসের একজন কবি নন, বাঙালির চেতনার এক জীবন্ত অনুরণন। তাঁর সৃষ্টি, ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি আজও যুগের মুখোমুখি প্রশ্নে তুলে ধরে উত্তর—সমতার, ভালোবাসার এবং প্রতিবাদের।
একুশে সংবাদ/স.ট/এ.জে