AB Bank
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আদৌ ছিলেন গোপাল ভাঁড়? ইতিহাসের অন্ধগলিতে লুকিয়ে কোন সত্যি?


Ekushey Sangbad
ফিচার ডেস্ক
১১:৫৪ এএম, ১ অক্টোবর, ২০২৩
আদৌ ছিলেন গোপাল ভাঁড়? ইতিহাসের অন্ধগলিতে লুকিয়ে কোন সত্যি?

তিনি আজও আছেন। সময়ের হিসেবে সবই তো হেজেমজে যায়। থেকে যায় কেবল লোকশ্রুতি। ইতিহাস কেবল রাজায় রাজায় যুদ্ধের কাহিনি, সাম্রাজ্যবাদের খতিয়ান নয়। লোকের মুখে মুখে ঘুরতে থাকা আমাদের ফেলে আসা অতীত-মানুষের জীবনগাথাও। সেই সাব অল্টার্ন ইতিবৃত্তের এক অবিসংবাদী নায়ক গোপাল ভাঁড়। যুগ থেকে যুগ বদলেছে। কিন্তু নেহাতই সেকেলে হয়ে পড়া সময়ের এক প্রতিনিধি আজও প্রাসঙ্গিক।

 

গোপাল ভাঁড় কি সত্যিই ছিলেন? তিনি কি রক্তমাংসের এক চরিত্র? নাকি নিছকই এক মিথ, যাঁকে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় স্থান করে দিয়েছে লোকশ্রুতি? কালে কালে গালগল্পে ভরে উঠেছে গোপালের কীর্তির ভাণ্ডার। যার ঝলকানি আজও দিব্যি মালুম হয়। সত্যিটা কোনটা? নিজেকে গোপাল ভাঁড়ের বংশধর বলে পরিচয় দেওয়া নগেন্দ্রনাথ দাসের একটি বই রয়েছে। ‘নবদ্বীপ কাহিনী বা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়’। সেটাকে প্রামাণ্য জীবনী ধরলে মানতেই হবে গোপাল সত্যিই ছিলেন। কিন্তু… অসংখ্য ‘কিন্তু’র কুয়াশা এই একটি বই দিয়ে ঢেকে দেওয়া কি সম্ভব?

 

১৯২৬ সালে প্রকাশিত নগেন্দ্রনাথের বইটির প্রকাশক তিনি নিজেই। ছেপেছিল কুন্তলীন প্রেস। তিনি দাবি করেন, গোপাল ভাঁড়ের আসল নাম গোপালচন্দ্র নাই। অর্থাৎ বংশগত ভাবে তিনি নাপিত। কিন্তু ছুরি-কাঁচি হাতে তুলে নেননি গোপাল। বরং ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অন্তঃপুরের ভাণ্ডারের এক তত্ত্বাবধায়ক। সেই ভাণ্ডার থেকেই ভাণ্ড তথা ভাঁড়। গোপালের বাবা দুলালচন্দ্রও ক্ষৌরকর্ম করতেন না। তিনি ছিলেন নবাব আলিবর্দি খাঁর বৈদ্য। আসলে সেযুগে শল্যচিকিৎসার কাজও বহু সময় নাপিতরাই করতেন। দুলাল সিরাজউদ্দৌল্লাকে বাল্যকালে কঠিন অসুখ থেকে বাঁচিয়েছিলেন। তাঁরই বড় ছেলে কল্যাণ। কনিষ্ঠ আমাদের চিরচেনা গোপাল। যিনি ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব বুদ্ধিমান। লোকমুখে তাঁর দুর্দান্ত সব মজার অথচ বুদ্ধিদীপ্ত কাহিনি ছড়িয়ে পড়েছিল। আর তার জেরেই ক্রমে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় স্থান। কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে পঞ্চরত্নসভার অন্যতম রত্ন গোপালের এক তৈলচিত্রও রয়েছে। এমনই সব দাবি রয়েছে গোপালের রক্তমাংসের অস্তিত্বের সপক্ষে।

 Inscript - একজন নয়, গোপাল ভাঁড় আসলে একাধিক ব্যক্তি! ঐতিহাসিক এই চরিত্রকে  ঘিরে হাজারও রহস্য

কিন্তু এই সব দাবি কি সত্যি? কিংবদন্তি ভাষাবিদ ও ঐতিহাসিক সুকুমার সেন বলছেন, ‘গোপাল ভাঁড় সম্পর্কে আধুনিক বাঙালির কৌতূহল থাকার ফলে বাস্তব অথবা কল্পিত ব্যক্তিটির সম্পর্কে যে জনশ্রুতি জাতীয় ঐতিহ্য গজিয়ে উঠেছে ও উঠছে তার বীজ হচ্ছে ভাঁড় নামের অংশটি, গোপাল ভাঁড়ের ভাঁড়টুকু সংস্কৃত শব্দ ভাণ্ডারের ‘ভাণ্ড’-জাত মনে করে অনেক গোপালের জাতি নির্ণয় করেছেন। পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তি যাই হোক, গোপাল ভাঁড় বাঙালি রসিক ও লৌকিক সংস্কৃতিতে অমলিন হয়ে আছেন।’ এখানে ‘বাস্তব অথবা কল্পিত ব্যক্তি’ শব্দবন্ধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিমল গোস্বামীর লেখাতেও পরিষ্কার দাবি করা হয়েছে, গোপালের অস্তিত্বরা গবেষকরা খুঁজে পাননি।

 গোপাল ভাঁড় আসলে কে, অবশেষে জানা গেল গোপাল ভাঁড়ের আসল পরিচয়

এও সত্যি যে, গোপালের জন্মসাল কিংবা কোথায় তিনি জন্মেছিলেন তা কোনও নথিতে পাওয়া যায় না। এমনকী, তাঁর জমিবাড়ির দলিল-দস্তাবেজ মায় ছবি- কিছুই নেই। অবশ্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের তৈলচিত্রকে বাদ দিলে। যে ছবিকে ঐতিহাসিকরা গুরুত্ব দেন না বলেই জানা যাচ্ছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভার আরেক উজ্জ্বল নাম কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র। তিনি এত কিছু লিখেছেন, কিন্তু তাঁর রচনায় রাজার রাজসভার এত গুরুত্বপূর্ণ একটা নাম গোপালকে নিয়ে কিছুই নেই। ছিলেন সাধক রামপ্রসাদ সেনও। রাজার সভার এই কিংবদন্তি রত্নও কোথাও গোপালকে নিয়ে কিছু লিখেছেন বলে জানা যায় না। যদি সত্যিই গোপাল সেই সভায় থেকে থাকেন, তাহলে কেন এঁরা নীরব রইলেন? বিশেষ করে ভারতচন্দ্র। যাঁর লেখায় আমরা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদদের সম্পর্কে জানতে পারি। এমনকী, এও জানা যায় সভায় শঙ্কর ও তরঙ্গ নামে দুই ভাঁড় ছিলেন। ‘অতিপ্রিয় পারিষদ শঙ্কর তরঙ্গ/ হরষিতে বলরাম সদা রঙ্গভঙ্গ।’ কিন্তু গোপাল? কিংবদন্তি বিদূষকের নাম কেন লেখা হল না?

 

১৯৫৩ সালের বাংলা ছবি ‘গোপাল ভাঁড়’-এর কথা বলা যাক। সেই সময় প্রতিটা ছবির সঙ্গে বুকলেট দেওয়া হত। এই ছবির সঙ্গে দেওয়া বইয়ে পাওয়া যাচ্ছে গানগুলিও। বৈষ্ণব আজু গোঁসাই গোপালকে খোঁচা দিচ্ছেন, ‘কৃষ্ণচন্দ্রের অশেষ দয়া তাই খাচ্ছ সুখে দুধকলা/ ছত্রছায়া সরে গেলে খাবে শুধু কাঁচকলা।’ এই গানের লাইনগুলি লিখেছিলেন বিজন ভট্টাচার্য। তৎকালীন সমাজ এক সাধারণ মানুষের রাজার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠাকে কী চোখে দেখছে সেটাই এখানে বুঝিয়েছেন তিনি। যা পড়তে গিয়ে মনে হয়, কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে গোপালের বেশি গুরুত্ব পাওয়াতেই ভারতচন্দ্র ঈর্শাবশত কিছু লেখেননি- এমনটাও তো হতে পারে।

 

যাই হোক। একদিকে নগেন্দ্রনাথের লেখা গোপাল জীবনী। অন্যদিকে নানাবিধ কূট যুক্তি। পাল্লা ভারী কিন্তু দ্বিতীয় দিকেরই। তবে একথাও ঠিক গোপালের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনও নিশ্চিত ধারণায় আসা আজও বোধহয় সম্ভব নয়। চারপাশে কুয়াশা। কিন্তু এত কুয়াশার মধ্যে কেবল ঝলমলে রোদ আসলে গোপালের গল্পগুলো। সেগুলো আসলে ‘সত্যি’। কেননা সেই গল্পের ভিতরে আপাত হাস্যরসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা জীবনশিক্ষার জোর এত বেশি যে, তা যুগের পর যুগ পেরিয়েও টিকে থেকেছে।

 

আজও কার্টুন চরিত্র হয়ে ছোটদের আনন্দ দেন গোপাল ভাঁড়। রাষ্ট্রযন্ত্র তথা শাসকের মুখের উপরে সত্যি কথা বলার হিম্মত দেখে তাক লাগে হরিপদ কেরানিদের। গোপালের চেহারা গোলগাল। টাকমাথা, ভুঁড়িওয়ালা মানুষটা তবুও একজন ‘হিরো’। লঘু রসিকতা করা ‘ভাঁড়’ বলে তাচ্ছিল্য করলেও তাঁর কিছু এসে যায় না। গোপালের তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ অন্যদের মতো সোজা রাজার উদ্দেশেও ধেয়ে যায় থেকে। সেই সব গল্প আমাদের কত কথা মনে করিয়ে দেয়! ভবিষ্যতেও দেবে। কেননা সমাজের চেহারা বদলালেও মৌলিক বিষয়গুলি বদলায় না। আর তাই গোপাল রক্তমাংসের হোন বা না হোন, তিনি হেঁটে বেড়াবেন শতকের পর শতক পেরিয়ে।

 

একুশে সংবাদ/স.প.প্র/জাহা

 

Link copied!