বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল থেকে বার্ষিক সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ।
রোববার (২২ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সভায় এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকর সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাংলাদেশকে ঋণ দেয়া প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক এমডি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে সস্তা ঋণ পদ্ধতি হচ্ছে আইডিএ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে পরিশোধযোগ্য এ ঋণ দেয়া হয়। এ ঋণের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম। তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের চাহিদাও দেখা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক এমডি আরও বলেন, বাংলাদেশে ৫৬টি চলমান প্রকল্পে প্রায় ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রমে পাশে ছিল। এ ছাড়া আইডিএ এর আওতায় অনুদান, সুদবিহীন ঋণ এবং নমনীয় ঋণ হিসেবে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
করোনা সংকট ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে অনেক দেশ বাজেট সহায়তা চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার চাহিদার মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে অল্প করে বাজেট সহায়তা দেয়া হবে। করোনার জন্য এখন অনেক দেশের অর্থ দরকার।
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ তুলে ট্রটসেনবার্গ বলেন, ৫০ বছরে ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে ঋণ দেয়া বা না দেয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৬৫ প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের অন্যতম হিসেবে এ যাত্রায় অংশীদার হতে পেরে গর্বিত বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের এমডি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ৫০ বছরের উন্নয়ন দেখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশ ছিল বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখেছি উন্নয়ন কীভাবে কাজ করে।’
গত পাঁচ দশকের অসাধারণ অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অবিচল অংশীদার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি ও শিল্পের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ ও বিদ্যুৎ খাতের সহায়তার জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ঋণ দেয়া হয়। এ ছাড়া স্বাধীনতার আগে অনুমোদিত চারটি প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। প্রকল্পগুলো স্বাধীনতার পর পুনরায় চালু করা হয়।
সভায় ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশের আর্থিক খাত ও কর ব্যবস্থাসহ পাঁচটি খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন অ্যাক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে, আগামী দিনেও পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২১ জানুয়ারি ৩ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন) অ্যাক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ। তিনি বিশ্বব্যাংকের দ্বিতীয় কর্তাব্যক্তি।
একুশে সংবাদ.কম/চ.ট.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :