কোলাহল আর কর্মব্যস্ততা নেই চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে। অল্প পরিসরে পণ্য আসলেও তা অন্যত্র খালাস করা হচ্ছে। প্রধানত ফ্লাইএ্যাশ ও সয়াবিনের ভুষি আসছে। ভারতের রেলপথ থেকে পণ্য আমদানি সহজ ও খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে দর্শনা রেলইয়ার্ড বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে দর্শনা রেলপথের রাজস্ব আয় হয়েছে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ছিল। এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
কাজ না থাকায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজনের সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ অন্য জেলায় গিয়েছেন। তবে এখনও তারা আশা করছেন, ব্যবসায়ীরা পুনরায় ভারত থেকে বেশি পণ্য আমদানি করবেন।
এক সময় রেলইয়ার্ডে শতাধিক ট্রাক থাকলেও বর্তমানে হাতে গোনা ১০-১৫টি ট্রাক রয়েছে। ট্রাক মালিকরা ভাড়া না পাওয়ায় অন্য জায়গায় ট্রাক পাঠাচ্ছেন এবং মাসিক লোকসান গুনছেন। চালক ও হেলপাররা অলস সময় পার করছেন।
ভারত থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে মালবাহি ওয়াগনে করে ভূট্টা, পাথর, পেঁয়াজ, ফ্লাইএ্যাশ, জিপসামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হতো। এখন আসছে মূলত ফ্লাইএ্যাশ ও সয়াবিন ভুষি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৯৭৪৯ ওয়াগনে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়ে ২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৪৪৮৬ ওয়াগনে ২ লাখ ৫২ হাজার ১০১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে, রাজস্ব আয় ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
শ্রমিকরা জানান, করোনাকালীন সময়ে রেলইয়ার্ড স্থবির হয়ে গিয়েছিল। করোনাকালীন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ভারত থেকে ব্যবসায়ীরা পুনরায় পণ্য আমদানি শুরু করেছিলেন। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অল্প পরিসরে পণ্য আসলেও অধিকাংশ অন্যত্র খালাস হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, “ভারত থেকে পণ্য আনা সহজ ছিল। কিন্তু এখন নানা জটিলতার কারণে রেলপথ ব্যবহার বন্ধ। এলসির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার সব সময় পাওয়া যায় না। মাল না আসায় রেলইয়ার্ড পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ইয়ার্ডে প্রাণ ফিরে আসবে না।”
চুয়াডাঙ্গা দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মির্জা কামরুল হক বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবছর রাজস্ব অর্ধেকে নেমেছে। লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। রাজস্ব কম হওয়ার কারণ ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে অল্প পরিসরে পণ্য আমদানি করছেন। পণ্য আমদানি স্বাভাবিক হলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।”
একুশে সংবাদ/চু.প্র/এ.জে