রাজশাহীর তানোরে সংখ্যালঘুর চুক্তিকৃত ও বিক্রি করা জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের তানোর–চৌবাড়িয়া সড়কের মালশিরা মোড়ের পশ্চিমে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে উভয় পক্ষকে কাগজপত্রসহ থানায় আসতে বলে।
এ ঘটনায় একদিকে রয়েছেন যুবদলের সদস্য সচিব শরীফ উদ্দিন মুন্সি, অন্যদিকে রয়েছেন সম্প্রতি সংখ্যালঘুর কাছ থেকে জমি ক্রয়কারী রেজাউল। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি সংখ্যালঘু সেতু কুমার মণ্ডল হুমকির মুখে রয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের সংখ্যালঘু দিলিপ কুমার ২০১৬ সালের অক্টোবরে মালশিরা মৌজার আরএস ৩১৬ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৬৬৩ ও ৬৬৪ দাগের ২০.৩৩ শতাংশ জমি শরীফ উদ্দিন মুন্সির কাছে বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। প্রতি শতাংশ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দরে মোট ২২ লাখ টাকা লেনদেন হয় এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র লিখিত হয়। চলতি বছরের সরকার পতনের পর শরীফ উদ্দিন মুন্সি টিন দিয়ে জমিটি ঘিরে দখলে নেন। এ ঘটনায় সেতু কুমার মণ্ডল ও তার মা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পাল্টা অভিযোগ করেন শরীফ উদ্দিন মুন্সির ম্যানেজার নকুল চন্দ্র রবিদাস।
এদিকে জমিটির প্রকৃত মালিক ছিলেন জব্বার আলী মণ্ডল। তিনি ১৯৯২ সালের ৩ মার্চ দলিল মূলে জমিটি বিক্রি করেন সত্যেন্দ্র নাথ মণ্ডলকে। সত্যেন্দ্র মারা গেলে তার তিন পুত্র আনন্দ কুমার মণ্ডল, রূপ কুমার মণ্ডল ও দিলিপ কুমার মণ্ডল ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হন। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর দিলিপ কুমার মণ্ডল তার স্ত্রী লিপি রানী ও ছেলে সেতু কুমার মণ্ডলের কাছে বিক্রি করেন (দলিল নং ৫৭৯২)। আবার ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর দিলিপ দান দলিলের মাধ্যমে ছেলেকে জমি দেন (দলিল নং ১৯১২)। পরবর্তীতে তাদের নামে খারিজও সম্পন্ন হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মালশিরা মোড়ের পশ্চিমের একটি পতিত চাতাল টিন দিয়ে ঘেরা ছিল। সম্প্রতি জমির ক্রেতা রেজাউল বাঁশ ও তারের বেড়া দিয়ে ঘিরতে গেলে শরীফ মুন্সির লোকজন বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেয়।
জমির মালিক সেতু কুমার মণ্ডল জানান, “আমার বাবা ২০১২ ও ২০১৪ সালে জমিটি আমাদের নামে বিক্রি ও দান করেছেন। তারপরও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শরীফ মুন্সি জোর করে দখল নিয়েছেন। আমরা আইনের আশ্রয় নিলেও প্রতিকার পাইনি। সম্প্রতি আমি জমির অংশ রেজাউলের কাছে বিক্রি করেছি। দখল বুঝিয়ে দিতে গেলে শরীফ মুন্সির লোকজন বাধা দেয় এবং হুমকি দেয়।”
ক্রেতা রেজাউল বলেন, “আমার দলিলসহ সব কাগজপত্র সঠিক আছে। যারা বাধা দিচ্ছে, তারাও যদি বৈধ দলিল দেখাতে পারে, আমি জমি ছেড়ে দেব। কিন্তু ২০১২ ও ২০১৪ সালে জমি বিক্রির পর ২০১৬ সালে শরীফ মুন্সি কেবল স্ট্যাম্পে লিখাপড়া করেছেন, যা আইনগতভাবে বৈধ নয়।”
শরীফ উদ্দিন মুন্সি জানান, “দীর্ঘদিন আগে এ জমির বায়নামা করেছি। তাই জমি ঘিরে মালামাল রেখেছিলাম। এখন টিন খুলে নেওয়ায় মালামাল চুরি হলে দায় নেবে কে? রেজাউল জমি কিনেছে ঠিক আছে, তবে আগে বসে বিষয়টি সমাধান করা উচিত ছিল। থানায় আলোচনায় বসা হবে, তখন দিলিপকেও হাজির করতে হবে।”
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে