ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের গর্তে পড়ে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-কে দায়ী করে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়ার পাশাপাশি বিরাজ করছে উত্তেজনা।
বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকালে উপজেলা পরিষদের সামনে উত্তরগাঁও এলাকাবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ঠিকাদার মতিউর রহমান ও ইউএনও শাফিউল মাজলুবিন রহমানের অবহেলাজনিত অপরাধের বিচার দাবি করেন।
তারা বলেন, ইউএনও যদি নিজেই আইন ভঙ্গ করেন, তবে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবে কে? বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও উল্টো ইউএনও নিজেই ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করেছেন এবং সেই বালু রামরাই দীঘিতে নিয়ে গেছেন। এ ড্রেজারের খননকৃত গর্তেই উত্তরগাঁও গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে শায়ান আহম্মদ (১০) খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। পরে ড্রেজারের লোকজন তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
শিশুর মা বিলকিস বেগম বলেন, “আমার ছেলের বিনিময়ে আমি কিছু চাই না। যাদের অবহেলায় আমার সন্তান মারা গেছে, তাদের বিচার চাই।”
ইউএনও শাফিউল মাজলুবিন রহমান এ বিষয়ে বলেন, “আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালু কিনে এনেছি। আমার নির্দেশে কেউ ড্রেজার বসায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড যেখানে বালু রাখে, সেখান থেকে আমি ৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনে এনেছি।”
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, “নদী থেকে বালু উত্তোলন কিংবা ড্রেজার বসানোর ক্ষমতা আমার নেই। বিক্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। যা করেছে, তা ইউএনও করেছেন।”
তিনি আরও জানান, “আগে সেখানে ড্রেজার বসানো হয়েছিল, যা আমি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ইউএনও রাণীশংকৈল রামরাই দীঘির কাজে ব্যবহার করার জন্য ১৫০-২০০ গাড়ি বালু নিয়ে গেছেন বলে এলাকাবাসীর মুখে শুনেছি।”
জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, “ঘটনাটি আমি শুনেছি। শিশুর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। ইউএনও জানিয়েছেন তিনি বালু কিনেছেন। তবে তিনি যদি সরাসরি নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে থাকেন, তবে সেটি বেআইনি। ইতিমধ্যে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে স্থানীয় প্রশাসনের জব্দ করা চোরাই ও ঝরে পড়া শালগাছ স’মিলে সরবরাহের অভিযোগও ওঠে। শ্রমিকদের দাবি, ওই কাঠগুলো ইউএনও অফিসের কর্মী বিকাশ ও চালক রফিক ভ্যানযোগে সেখানে নিয়ে আসেন।
একুশে সংবাদ/ঠা.প্র/এ.জে