‘জুলাইয়ের রক্তে লিখি শিক্ষার অধিকার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড শিক্ষা সামগ্রী ডোনেশন ক্যাম্পেইন-২০২৫ ঘোষণা করেছে কাগজবাড়ি নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
বুধবার (৬ই আগষ্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন ক্যাম্পেইনের আহ্বায়ক ও কাগজবাড়ির পরিচালক জাহিদ আনোয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ জাতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়। এই আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। ২০২৪ এর এই বিপ্লব দেশের ইতিহাসে একটি বাঁক বদলের সময়। দেশের সাহসী তরুণসমাজ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং অধিকারের পক্ষে। তবে কোটা সংস্কার নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও বৈষম্যের প্রতিবাদে আন্দোলনটা শুরু করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরাই। আর সেই শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘কাগজবাড়ি’ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে; যা জুলাই ও নতুন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরও একবার অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে সংগঠনটি।
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের রক্তে লিখি শিক্ষার অধিকার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা এই মহতি উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এই বিশ্বরেকর্ড অর্জনে ১২ ঘণ্টায় দেশব্যাপী ১৫০০ স্কুলে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে এক মাসের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হবে। যার ওজন প্রায় ৬০ হাজার কেজি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালের ২২ মে ভারতের গুজরাটের ‘গোকুলধাম নার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এবং আমেরিকার ‘হেলপিং হ্যান্ডস ফর হিউম্যানিটি ভার্জিনিয়া’ যৌথভাবে এই বিশ্ব রেকর্ড করেছিল। তারা ২৪ ঘণ্টায় ৪ লাখের বেশি নোটবুক (খাতা) গুজরাটের আনন্দ জেলার ১০১৯টি স্কুলে বিতরণ করেছিল। যার ওজন ছিল ৫৬,৫০৫.৪০ কেজি।
বিশ্ব রেকর্ড গড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব রেকর্ড গড়লে তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এটি তাদেরকে অনন্য ও বিশেষ করে তোলে। বিশ্ব রেকর্ড করে দেশের প্রতিনিধিত্ব করলে সেই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। গর্ব ও সম্মান বৃদ্ধি পায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়া মানে ইতিহাসে নাম লেখানো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেই নামকে মনে রাখে ও অনুসরণ করে।
কাগজবাড়িও এই রেকর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের গৌরব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চায়। পাশাপাশি জুলাই আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও বিপ্লবের চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
কাগজবাড়ি মনে করে, ‘স্বাধীনতা মানে কেবল একটি পতাকা নয়, স্বাধীনতা মানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে একটি খাতা, একটি কলম- একটি সুযোগ’। এজন্য জুলাই চেতনায় উজ্জীবীত হয়ে একদল তরুণের উদ্যোগে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি শিক্ষাবান্ধব বিশ্বরেকর্ড গড়তে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য কেবল বিশ্বরেকর্ড নয়— এটি একটি শিক্ষা-আন্দোলন বলে উল্লেখ্য করে জাহিদ আনোয়ার বলেন, আমাদের এই মহতি উদ্যোগকে সফল করতে সমাজের সব শেণির পেশার মানুষকে পাশে চাই। সেই সঙ্গে মহান এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, গ্রুপ অব কোম্পানি, এনজিও, নাগরিক সমাজসহ বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশের গৌরব বয়ে আনা এই বিশ্বরেকর্ডের কার্যক্রমে স্পন্সরশিপ বা করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই। কেননা, আপনাদের সহযোগিতায় লাখো শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে যাবে শিক্ষা উপকরণ। দেশের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের গৌরবের অংশীদার হবেন আপনারও। এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ শুধু শিক্ষার্থীদেরকে সহযোগিতা নয়— এটি ইতিহাস গড়ার সুযোগ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইতিহাস গড়ার সাক্ষী হতে আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পেইনের উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন পরিষদের অন্যতম উপদেষ্টা রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আতিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে বাঁচিয়ে রাখতে কাগজবাড়ির উদ্যোগে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড শিক্ষা সামগ্রী ডোনেশন ক্যাম্পেইন-২০২৫ হতে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের অংশ হতে পেরে নিজেকে সত্যিই সৌভাগ্যমান মনে করছি। এই উদ্যোগকে সফল করতে আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। সেই সাথে এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়ে সার্বিক সহযোগিতার জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোকে আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-সিজিডি`র নির্বাহী পরিচালক সাইদুল ইসলাম এবং গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাগজবাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজোয়ান কবির কৌশিক, পরিচালক মো. শাহ আলম ও এ কে সালমানসহ কাগজবাড়ির টিমের সদস্যরা।
একুশে সংবাদ/রাফি/বাবু/এ.জে