ছাদ থেকে ফোটায় ফোটায় জল পড়ে জল আর কাদায় একাকার হয়ে গেছে কোটচাঁদপুরের সার্বরেজিস্ট্রি অফিস। কর্মকর্তার খাস কামরার টেবিলে পানি নিষ্কাশনের জন্য বিছানো হয়েছে খবরের কাগজ আর ট্রায়াল। পলিথিনে মুড়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে রেকর্ডরুমের মূল্যবান কাগজপত্র। এভাবেই চলছে উপজেলা সার্বরেজিস্ট্রি অফিসের জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কোটচাঁদপুর সার্বরেজিস্ট্রি অফিস।
যেটি উপজেলা পরিষদের মধ্যে অবস্থিত। আগে ওই ভবনটি আদালত হিসেবে ব্যবহার হতো। পরে এখান থেকে আদালত প্রত্যহার হলে ভবনের ৫টি কক্ষে চলছিল জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। যার একটি ব্যবহার হয় এজলাস হিসেবে। পাশের কক্ষটি সার্বরেজিস্ট্রারের খাস কামরা। এরপর রয়েছে রেকর্ড রুম। যেটিতে রয়েছে এ উপজেলার মানুষের অতি মূল্যবান দলিলসহ কাগজপত্র। পাশের দুইটি কক্ষে চলে নকল নোবিশদের কার্যক্রম।
জানা যায়, গেল ২৫-৩০ বছর ধরে ভবনটি ব্যবহারিত হচ্ছে সার্বরেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে। এরমধ্যে ভবনের কিছু সংস্কারের কাজ করার পর বেশ কিছু দিন ভালো ছিল। তারপর থেকে প্রায় ১০ বছর আর কোনো কাজ না হওয়ায় বর্তমানে তা পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা মানুষেরেও ভোগান্তির অন্ত নেই। কারণ ওই ভবনের সর্বত্র পানি পড়ায় দাঁড়ানো আর বসার জায়গাটুকু নেই তাদের। এমন অভিযোগ করেছেন পৌরসভার দুধসরার গ্রামের ভুক্তভোগী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, গেল ৫ বছর আগে জমি রেজিস্ট্রি করতে এসে এ অবস্থা দেখে গিয়েছিলাম। আজও সেই অবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ওরা টাকা আয় করবেন, এসব কিছু মেরামত করবেন না।
জয়দিয়া গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, এটা একটা সরকারি অফিস। দেখলে মনে হচ্ছে, মাছের হাট। মাছের হাটে গেলে যেমন বাড়িতে গিয়ে গোসল করতে হয়, ঠিক তেমনি জমি রেজিস্ট্রি করতে এসে কাদা পানিতে একাকার হয়ে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে গোসল করতে হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা মানুষের নেই কোনো দাঁড়ানো বসার জায়গাটাও। এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।
সার্বরেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক আব্দুল মালেক বলেন, আমি গেল ৪-৫ বছর এ অফিসে আছি। এর আগে থেকেই শুনেছি ভবনের এ অবস্থা চলে আসছে। তবে গেল দুই বছর আরও অবস্থা খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ভবনের ৫টি কক্ষে চলে আমাদের কার্যক্রম। প্রতিটি কক্ষের একই অবস্থা। বৃষ্টির পানি ছাদে পড়ার সাথে সাথে কক্ষে ঢুকে পড়ে পানি। এতে করে ফ্লোরে চলাচল করা যায় না। কাদাময় হয়ে যায় সব জায়গা। আর ছাদ থেকে পড়া ফোটা ফোটা পানি থেকে কাগজপত্র রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আর স্যারের রুমে টেবিলের পানি শুকাতে পেতে রাখা হয়েছে খবরের কাগজ আর ট্রায়াল।
তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি বিষয়টি নিয়ে এর আগে বেশ কয়েক বার ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে লেখা হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। তারপর আবারও লেখা হবে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা সার্বরেজিস্ট্রার তামীম আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, আমি দুই বছর ধরে এ অফিসে আছি। গেল বছরও পানি নিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছিলাম। তবে গেল বছরের তুলনায় এ বছর অবস্থা ভয়াবহ। তিনি বলেন, আপনারা দেখতে পারছেন, আমার টেবিলে পানি নিষ্কাশন করতে বিছিয়ে রাখা হয়েছে খবরের কাগজ আর ট্রায়াল, সেটিও আমি কিছু মনে করছি না। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, এ উপজেলার মানুষের অতি মূল্যবান কাগজপত্র রয়েছে রেকর্ড রুমে। যা ভিজে নস্ট হয়ে গেলে সে দায় কে নিবে।
তিনি আরো বলেন, গেল সপ্তাহে ইউএনও স্যারকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এছাড়া স্থানীয় নেতৃবৃন্দদেরকেও বলা হয়েছে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য।
একুশে সংবাদ/ঝি.প্র/এ.জে