কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপজেলা প্রধান সমন্বয়ক রাজিন সালেহর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে আড়াই বছরের কন্যাশিশুকে মায়ের কাছ থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার হাসি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে পাকুন্দিয়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন সুমাইয়া। তিনি উপজেলার চরটেকী গ্রামের তাজউদ্দিনের মেয়ে। সংবাদ সম্মেলনে তার মা হোসনা বেগমও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে সুমাইয়া বলেন, পাঁচ বছর আগে রাজিন সালেহর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। প্রায়ই মারধর করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। আড়াই বছরের মেয়ের কথা ভেবে সব সহ্য করেও তিনি সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।
সুমাইয়ার অভিযোগ, দেড় বছর আগে রাজিন গফরগাঁওয়ের দিঘীরপাড় আলিয়া মাদ্রাসায় কম্পিউটার অপারেটর পদে ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে চাইলে ১৩ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। সেই টাকার যোগান দিতে সুমাইয়ার চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে দেন রাজিন। কিছুদিন পর আবারও নির্যাতন শুরু হলে একপর্যায়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
গত ৩০ জুন সুমাইয়া পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, অভিযোগের পর এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা সানী আহম্মেদ ফোনে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন এবং সমঝোতার আশ্বাস দেন। সেই আশ্বাসে তিনি আপাতত অভিযোগ স্থগিত রাখলেও পরবর্তীতে কোনো সমঝোতা হয়নি।
সুমাইয়া আরও বলেন, গত ৫ জুলাই বিকেলে রাজিন তার এক ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েকে "কিছুক্ষণ পর ফেরত দেব" বলে কোল থেকে নিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি শিশুটিকে আর ফেরত পাননি। পরে ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, ২৭ জুন আদালতের মাধ্যমে রাজিন তাকে তালাক দিয়েছেন, তবে তিনি এ বিষয়ে পূর্বে কিছুই জানতেন না।
অভিযোগ সম্পর্কে রাজিন সালেহ বলেন, “আমি রাষ্ট্রীয় নিয়ম মেনেই তালাক দিয়েছি এবং কাবিনের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করেছি। তালাকের কাগজ পাঠানো হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। শিশুটিকে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আমি তাকে আমার কাছে রেখেছি। শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমেই তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
রাজিন এ অভিযোগকে "সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়" উল্লেখ করে বলেন, “এখানে রাজনৈতিক দলের নাম টেনে এনসিপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। যেহেতু একটি শিশু এতে জড়িত, তাই সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। শিশুর ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ/কি.প্র/এ.জে