পদ্মা অধ্যুষিত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডিঙি নৌকার চাহিদা। বছরের আষাঢ়-শ্রাবণ ও কার্তিক মাস পর্যন্ত এই অঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রামের পথঘাটে পানি উঠে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। তখন হাট-বাজার ও বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে উঠে নৌকা।
তাই এ সময়ে বেড়ে যায় নৌকার কদর। নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন স্থানীয় কারিগররা। নতুন নৌকার পাশাপাশি অনেকে পুরাতন নৌকা মেরামতের জন্যও ছুটে আসেন তাদের কাছে। এ উপজেলায় পদ্মা এবং ইছামতি নদী ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি বড় বিল যার মধ্যে অন্যতম ভাতছালার বিল, গোপীনাথপুরের বিল, দিয়ার বিলসহ কয়েকটি বড় বড় বিল।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ কাঠমিস্ত্রি দোকানেই তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন সাইজের নৌকা। কাঠমিস্ত্রীরা কেউ কেউ রান্দা দিয়ে কাঠ মসৃণ করছেন, কেউ তক্তায় পেরেক মারছেন ও কেউ কেউ নৌকার ফিনিশিং দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকা তৈরির কাজে মেহগনি, কড়ই, বৈন্যা ও চাম্বুল কাঠ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
উপজেলার ঝিটকা বাজারের নৌকা তৈরির কারিগর কালাম মিয়া জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নৌকায় চাহিদা কিছুটা কম। ১০ হাত নৌকার দাম রাখছি ৬ হাজার টাকার মতো। বড়ো নৌকার পাশাপাশি ছোট নৌকারও অর্ডার পাচ্ছি মোটামুটি। এছাড়া হাটে খুচড়া বিক্রির জন্যও মাঝারি সাইজের নৌকা তৈরি করে রাখা হচ্ছে।
একই এলাকার কাঠ মিস্ত্রি অনিল বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই বর্ষার সময় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত থাকি। বছরের অন্য সময় নৌকা তৈরি ছাড়াও ঘর, খাট, চেয়ার, টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, আলনা, আলমারি ইত্যাদি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করি।
নৌকা কিনতে আসা গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের রাসেল মিয়া জানান, বর্ষার পানি আসলেই আমাগো নৌকা লাগে। গরুর ঘাস কাটা মাছ ধরা ও পারাপাড়ের জন্য নৌকা কিনতে আইচি বর্ষার সময় নৌকা ছাড়া আমরা অচল।
উপজেলার ঝিটকা বাজারের নৌকা ব্যবসায়ী মন্টু মন্ডল জানান, বেশকয়েক বছর যাবত তুলনামূলক পানি না হওয়ার কারণে ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। সর্বোপরি আমাদের ব্যবসাটা মূলত পানির ওপর নির্ভর করে। পানি বেশি হলে নৌকার চাহিদা বাড়ে। এতে করে বিক্রির পরিমাণও বাড়ে। এছাড়াও এবছর নৌকা তৈরির কাঠ, লোহাসহ অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার নৌকা তৈরীতে খরচ বেশি হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/মা.প্র/এ.জে