নাটোরের বড়াইগ্রামে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মিনহাস হোসেন আবীর (৯)–এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মাথা ও মুখমণ্ডল ইট দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে পাষণ্ডরা।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশু আবীরের লাশ উদ্ধার করা হয় বাড়ি থেকে সামান্য দূরে, উপজেলার বনপাড়া পৌর শহরের মহিষভাঙ্গা এলাকার নির্মাণাধীন একটি মসলা ফ্যাক্টরি সংলগ্ন ভুট্টা ক্ষেতে। নিহত আবীর বনপাড়া আদিব ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র এবং বনপাড়া পৌর শহরের মহিষভাঙ্গা মহল্লার মিলন হোসেনের একমাত্র ছেলে।
স্থানীয় জনগণ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে আবীর সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। তার সঙ্গে একটি দামি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনও ছিল। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও আবীর বাড়ি না ফেরায় তার মা-বাবা ও স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে আবীরের রক্তমাখা সাইকেলটি মসলা ফ্যাক্টরির পাশে পড়ে থাকতে দেখে স্বজনরা। এরপর মাটিতে রক্তের দাগ অনুসরণ করে ভুট্টা ক্ষেতের পাশে গিয়ে তারা আবীরের রক্তাক্ত মরদেহ খুঁজে পান। এ সময় মরদেহের আশপাশে কয়েকটি আস্ত ইট পাওয়া যায়, যেগুলো দিয়ে তার মাথা ও মুখমণ্ডলে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শিশু আবীরের পিতা মিলন হোসেন সৌদি আরবে চাকরি করেন। তিনি কোরবানির ঈদের আগে দেশে ফিরেছেন। ছেলের লাশ জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়া এই পিতা চিৎকার করে বলছিলেন, “এভাবে আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে, তাদের লাশও আমি দেখে মরতে চাই। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।”
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, তারা কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না। ইতোমধ্যে খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। খুব দ্রুতই খুনিদের আটক করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে শিশু আবীরকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের নাটোর জেলা আহ্বায়ক ও বড়াল প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক অমর ডি কস্তা তার ফেসবুকে আবীরের ব্যবহৃত সাইকেল, স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া ছবি ও মরদেহের ছবি পোস্ট করে খুনিদের উদ্দেশে লিখেন—
“কিরে অমানুষরা, তোরা কেন পৃথিবীতে? এইটুকু ছেলে তোদের কী ক্ষতি করেছে? তোরা কি আল্লাহকে একটুও ভয় করিস না? হে খোদা, তুমি এসব পশুদের কেন বাঁচিয়ে রেখেছো? কতটা নির্মম হত্যাকাণ্ড!”
ঠিক একইভাবে ‘নাটোর সময়’, ‘নাটোর মিডিয়া’, ‘নাটোর সমীকরণ’, ‘নাটোর সময়কাল’সহ বিভিন্ন ফেসবুক নিউজ পেইজে ভিডিও প্রকাশ হলে হাজার হাজার মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
একুশে সংবাদ/ না.প্র/এ.জে