মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮নং কালিঘাট ইউনিয়নে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের এককালীন ৬ হাজার টাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের দুই মাইক্রো মার্চেন্টের বিরুদ্ধে।
এছাড়া অর্ধশতাধিক চা-শ্রমিকের আঙুলের ছাপসহ বায়োম্যাট্রিক সব প্রক্রিয়া শনিবার শেষ করেও টাকা তুলতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন উপকারভোগীরা।
জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তায়িত চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এককালীন জনপ্রতি প্রত্যেক চা-শ্রমিককে ৬ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। উক্ত টাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিতে উপকারভোগীদের হাতে প্রদান করার কথা। কিন্তু গত শনিবার ও রবিবার ৮নং কালিঘাট ইউনিয়নের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট (মাইক্রো মার্চেন্ট) আশিশ কর্মকার এবং অপূর্ব তাঁতি বেশির ভাগ উপকারভোগীর হাতে বরাদ্দের পুরো টাকা না দিয়ে নিয়মবর্হিভূতভাবে জনপ্রতি ২০০ এবং ১০০ টাকা কম করে প্রদান করছেন। কালিঘাট ইউনিয়নে মোট ৬৪২ জন শ্রমিকের জন্য জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে মোট ৩৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
গতকাল রবিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৮নং কালিঘাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড (বটগাছ চৌমুহনী) এলাকায় অবস্থিত ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের এজেন্ট অপূর্ব তাঁতির দোকানের ভেতরে-বাইরে শতাধিক শ্রমিকের সমাগম। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেউ কেউ দুইদিন আগে এই দোকানে আঙুলের ছাপসহ বায়োম্যাট্রিক সব প্রক্রিয়া শেষ করে গেলেও টাকা তুলতে পারেননি, আবার কেউ কেউ সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছেন টাকা তোলার জন্য, কেউ বা আঙুলের ছাপ দিয়ে পেমেন্ট নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। কিন্ত এজেন্টের কাছে টাকা না থাকায় শ্রমিকরা টাকা নিতে পারছেন না। তবে টাকা নিয়েছেন এমন কয়েকজন বলেন, তারা ১০০ টাকা কম ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন অপূর্বের কাছ থেকে।
অপর এজেন্ট আশিশ কর্মকারের (কাঠার) দোকান বাগানের ১০নং লাইনের জগন্নাথ মন্দির এলাকায়। সেখানে গিয়েও দেখা যায় এককালীন ৬ হাজার টাকা তোলার জন্য দোকানের ভেতরে এবং বাইরে প্রচুর চা শ্রমিক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আলাপকালে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, মাইক্রো মার্চেন্ট আশিশ কর্মকার প্রত্যেক চা শ্রমিকের কাছ থেকে ২০০ টাকা খরচের কথা বলে ৫ হাজার ৮০০ টাকা করে দিচ্ছেন।
উপকারভোগী দুখনী তাঁতি বলেন, আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা কেটে নিয়েছে এজেন্ট আশিশ কর্মকার। বাণী তাঁতি বলেন, এজেন্ট অপূর্ব তাঁতি আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা কেটে রেখে ৫ হাজার ৯০০ টাকা দিয়েছে। সুনীল পাল বলেন, এজেন্ট আশিশ কর্মকার আমাকে ৬ হাজার টাকায় ২০০ টাকা কম দিয়েছে। পরমেশরী বলেন, আমাকে ৫ হাজার ৮০০ টাকা দিয়েছে, দুইশ টাকা কেটে রেখেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে কালিঘাট ইউনিয়নের মাইক্রো মার্চেন্ট আশিশ কর্মকার (কাঠার) বলেন, আমার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা তুলতে ৫২ টাকা চার্জ কাটে। শহরেই যদি উনারা ১৫০ টাকা রাখে, তার প্ররিপ্রেক্ষিতে আমরা কত রাখতে পারি আপনারাই বলেন, উনারা যদি শহর থেকে যাইয়া ১৫০ টাকা দিয়ে আনে তাহলে উনারাই বলুক শহর থেকে আনা বেনিফিট, না আমাদের এখানে।
অপর এজেন্ট অপূর্ব তাঁতির ভাই তপু তাঁতি বলেন, ভাই এজেন্ট, টাকা আনতে শহরে গেছে, আমাদের কাছে সকাল থেকে টাকা নাই তাই দিতে পারছি না। ১০০ টাকা নিচ্ছেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা আমার ভাই বলবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোয়েব হোসেন চৌধুরী বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ছোট-বড় ৪২টি চা বাগানের ১০ হাজার ৬৫০ জন চা-শ্রমিককে তাদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার টাকা করে এককালীন বছরে ৬ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এ টাকাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চা-শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। কালিঘাট ইউনিয়নে চা-শ্রমিকদের এককালীন টাকা তুলতে কেউ হয়রানির শিকার হলে ভুক্তভোগীদের সরাসরি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলবেন। চা শ্রমিকরা এককালীন টাকা ৬ হাজার পাওয়ারই কথা। তবে ৬ হাজার টাকা তুলতে ২০০ বা ১০০ কমিশন কাটে কিনা এ বিষয়ে আমার স্পষ্ট জানা নেই। এ বিষয়টি তাদের জেলা অফিসে কথা বলে আগামীকাল জানাব।
কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা বলেন, অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা নেই। আঙুলের ছাপসহ বায়োম্যাট্রিক সব প্রক্রিয়া শেষ করেও টাকার জন্য এজেন্টের পেছনে ঘোরাঘুরি বিষয়টা মেনে নেওয়ার মতো না। এ বিষয়টি আমি এখনই দেখছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি এখন জানলাম। খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যাংক এজেন্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও আমরা মির্জাপুর ইউনিয়নে উদ্যোক্তা ও ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টসহ ২ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
অনিয়মে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিযারি দিয়েছেন ইউএনও ইসলাম উদ্দিন।
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে