বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল মোংলায় আধুনিক চিকিৎসাসেবা এখন বিলাসিতার নামান্তর। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের জন্য নেই ন্যূনতম স্বাস্থ্য নিরাপত্তা। চিকিৎসাসেবা বলতে এখন শুধুই নামমাত্র ব্যবস্থা। ফলে এখানে দিন দিন জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে ৫০ শয্যার হলেও বাস্তবিক চাহিদার তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল। এখানকার মানুষের অভিযোগ—রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা, ভারী যন্ত্রপাতি এবং অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও নেই আইসিইউ, নেই ডায়ালাইসিস ইউনিট, বার্ন ইউনিট কিংবা ব্লাড ব্যাংকের মতো অত্যাবশ্যকীয় সেবা। এমনকি শিশুদের জন্য নেই বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ)। আর জরুরি অপারেশন থিয়েটারও রয়েছে নামমাত্র।
চিকিৎসাসেবার এই চরম সংকট থেকে মুক্তির জন্য স্থানীয়রা সম্প্রতি ১০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। মোংলার সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে দাবি জানান—এই অঞ্চলের জনগণের চিকিৎসার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
এ দাবির প্রেক্ষিতে মোংলাবাসীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান নিজ হাতে আবেদনটি পেশ করেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে হাসপাতাল ভবনের করুণ অবস্থা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ শাহিন বলেন, “এই হাসপাতালের ভবনটিই এখন নিজেই ধসে পড়ার অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। জরুরি ভিত্তিতে এর সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি, সাবেক প্যানেল মেয়র ও অ্যাডভোকেট কমিশনার মোঃ হোসেন বলেন, “প্রতিদিন শতাধিক রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। বিশেষ করে মা ও শিশুর জন্য এই হাসপাতাল একেবারে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।”
তাদের সাফ কথা—দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর ঘিরে গড়ে ওঠা একটি জনবহুল, শিল্পভিত্তিক শহরে আধুনিক ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা না থাকা চরম অবিচার।
মোংলাবাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এই হাসপাতাল আধুনিকীকরণ সম্ভব এবং স্বাস্থ্যখাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আসবে।
নইলে শুধু কাগজে-কলমে উন্নয়নের গল্প আর বাস্তবের হাহাকার—এই বৈপরীত্যই থেকে যাবে মোংলার মানুষের নিয়তি।
একুশে সংবাদ/বা.প্র/এ.জে