রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড বণ্টনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। দুস্থ ও অসহায় নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব ও ‘দখল রাজনীতি’।
অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন পরিষদে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া কার্ড স্থানীয় বিএনপি সভাপতির সঙ্গে না ভাগ করে সম্পাদক এককভাবে বিতরণের চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও দপ্তরে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে।
জানা গেছে, কলমা ইউনিয়নে বরাদ্দ পাওয়া ৫৬২টি ভিজিডি কার্ডের মধ্যে ২৫৫টি দেয়া হয় স্থানীয় বিএনপিকে, ৮০টি কার্ড জামায়াতকে এবং বাকি কার্ড ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে বিতরণ করার কথা। প্রতি কার্ডধারী পরিবার প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পায়।
এ বিষয়ে বিএনপির ইউনিয়ন সম্পাদক মানিরুল ইসলাম দাবি করেন, “আমরা চাই প্রকৃত অসহায়দের মধ্যে কার্ড দেওয়া হোক। প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতাদের নিয়ে তালিকা করার কথা বলেছি। কিন্তু সভাপতি ২৫৫টি কার্ডের অর্ধেক দাবি করেছেন, যা আমরা মেনে নিতে পারিনি।"
অপরদিকে, ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, “সম্পাদক একাই সব কার্ড নিয়েছেন। আমি চেয়েছি লটারির মাধ্যমে সবার সামনে কার্ড বিতরণ হোক, যাতে প্রকৃত দুস্থরা সুবিধা পান। কিন্তু তারা তা মানতে নারাজ।”
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউনিয়ন বিএনপির এই দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের রাজনীতির প্রভাব। সম্পাদক মানিরুল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত আলীর ঘনিষ্ঠ। আর সভাপতি মুস্তাফিজুর ওই গ্রুপের বিপরীতে অবস্থান করছেন।
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান আলী অভিযোগ করেন, “সভাপতি গভীর নলকূপ নিয়োগ বানিজ্যের পর এখন ভিজিডি কার্ড নিয়েও বানিজ্য করতে চাচ্ছেন। এজন্য আমরা সবাই একসাথে বসে তালিকা প্রস্তুতের প্রস্তাব দিলেও তিনি রাজি হননি।”
ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরী বলেন, “বিএনপিকে ২৫৫টি কার্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তালিকা প্রস্তুত হয়নি। হয়তো লটারির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।”
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন জানান, “ইউএনও স্যারের উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে সমাধান করা হবে। রাজনৈতিক সরকার নেই, তাই এসব সমন্বয়ের দায়িত্ব ইউপি চেয়ারম্যান পালন করছেন। সমস্যা হলে সমাধানের পথও রয়েছে।”
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ভিজিডি কার্ডের মতো মানবিক সহায়তা যেখানে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ হয়, সেখানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ের কারণে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন—এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে বিতরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, যাতে করে সাধারণ মানুষ তাদের প্রাপ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়।
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে