মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে সুইচগিয়ার (চাকু)সহ আটক পাঁচ যুবককে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে দেড় লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের একজনের দাবি, টাকা নেওয়ার পর পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়।
ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার গোয়ালীমান্দ্রা এলাকায়। শ্রীনগর থানার এসআই আমির হামজার নেতৃত্বে একটি দল ওই যুবকদের আটক করে। পরে শনিবার টাকা লেনদেনের পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
ঘটনার পর শ্রীনগর থানার সাব–ইন্সপেক্টর (এসআই) আমির হামজাকে ক্লোজ করে রবিবার মুন্সিগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পাঁচ যুবক হলেন—উপজেলার ভাগ্যকুল এলাকার সম্পদ শিকদার (২৫), মো. আকাশ শেখ (২৬), মো. অন্তর (২৭), মো. হানিফ (২৬) এবং মো. পান্নু (২৮)। তাঁদের মধ্যে হানিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই যুবকরা শুক্রবার মাওয়ায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে গোয়ালীমান্দ্রা এলাকায় পুলিশ তাঁদের আটক করে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, শনিবার দুপুরে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারায় তাঁদের আদালতে হাজির করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং এসআই আমির হামজা মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে প্রথমে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দেড় লাখ টাকায় বিষয়টি ‘মিটমাট’ হয় এবং টাকা নেওয়ার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
শ্রীনগর থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আকাশ শেখ একটি ভিডিও বার্তা দেন, যা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তিনি বলেন,
“কাল রাতে (শুক্রবার) ফেরিঘাটের রাস্তায় গোয়ালীমান্দ্রায় আমাদের আটক করে আমির হামজা স্যার। তিনি দেড় লাখ টাকায় ডিল করেন। ওই টাকা নেওয়ার পর আমাদের পাঁচজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা এখন বাসায় যাচ্ছি। কিন্তু ওই দেড় লাখ টাকা আমির হামজা স্যার নিয়েছেন।”
এসআই আমির হামজা টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি টাকা নিইনি, তবে কেউ না কেউ নিয়েছে—নইলে এমন অভিযোগ আসত না।”
তিনি আরও বলেন, “ওই পাঁচজনকে শুক্রবার রাতে আমি আটক করি। তাঁদের কাছে একটি সুইচগিয়ার ছিল। স্থানীয়রা ডাকাত সন্দেহে তাঁদের মারতে যাচ্ছিল। আমি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। শনিবার দুপুরে ওসি সাহেব তাঁদের আদালতে পাঠাতে বলেছিলেন। পরে দুপুর ২টার দিকে ওসি ও সার্কেল সাহেব তাঁদের ছেড়ে দিতে বলেন।”
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকিল আহমেদ বলেন, “তাঁদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছিল। তাঁদের কাছে কোনো সুইচগিয়ার পাওয়া যায়নি। অভিযোগ না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। টাকা লেনদেনের অভিযোগ মিথ্যা।”
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, “আটক ব্যক্তিদের অতীতে কোনো অপরাধ রেকর্ড নেই। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
একুশে সংবাদ/মু.প্র/এ.জে