দিন দিন রোগীর সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদীর পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ২৮ মার্চ ২০২৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. নন্দা সেন গুপ্তা ।
যোগদান করেই বিভিন্ন সেবামূলক কাজে উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন তিনি। সেখানে যে সমস্যা পরিলক্ষিত হয় সেখানেই দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যান তার সাধ্যমতো। এ হাসপাতালে আগে যেখানে সেবা নিতে আসা রোগীদের প্রায়ই বিরম্বনার শিকার হতে হতো সেখানে আজ রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যেখানে অসুস্থ রোগীরা এবং রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে এসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করতেন সেখানে আজ দৈনন্দিন পরিষ্কার-পরিছন্নতায় স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিয়ে ফিরছেন বাড়িতে। সেবা নিতে আসা রোগীদের ধরণ ও অবস্থা বুঝে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাদ দিয়ে সেখানে বর্তমানে রোগীর গুরুত্বের উপর নির্ভর করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিচ্ছেন পলাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডাক্তাররা । এতে করে রোগীর চিকিৎসা সেবার মান ও ব্যয়ভার অনেকটা সহজ হচ্ছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ঔষধপত্রের মূল্য যেখানে আকাশ ছোঁয়া সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীর নাভিঃশ্বাস। সে সময়টা রোগীর অবস্থার পরিমাপের উপর নির্ভর করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কমিয়ে শুধু ব্যবস্থাপত্র দিয়ে সেবার হাত প্রসারিত করে রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এমন অভিযোগ রয়েছে দালালের খপ্পরে পরে নিরীহ রোগীর স্বজনরা সর্বশান্ত হচ্ছেন। মাসের পর মাস বছরের পর বছর এমন শিরোনাম হয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এ কর্মকর্তা। সদর হাসপাতালে প্রতিদিন দেখা যায় জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন যায়গায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টান-টানি করছে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভরা।
আজ তাদেরকে হাসপাতালের বাহিরে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে রোগী এবং তাদের স্বজনদেরকে রিপ্রেজেন্টটিভদের বিরম্বনার হাত থেকে অনেকটা নিষ্কৃতি দিয়েছেন বর্তমান দায়িত্বরত এই কর্মকর্তা। পলাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদেরকে বাহিরে ক্লিনিকে পাঠানো হতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। সেখানে আজ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেন গুপ্তা এর দায়িত্ব নেওয়ার পর তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে নতুন যন্ত্রপাতি হসপাতালে আনয়নের মাধ্যমে, CBC, RBS, S.Creatinine, SGPT, RA ও ব্লাড গ্রুপসহ প্রায় বিশটিরও বেশি পরীক্ষা এখন চালু করা হয়েছে। তিনি আরও জানান এক্সে-রে ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনগুলো টেকনেশিয়ানের কারণে এখন বন্ধ আছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এই পরীক্ষাগুলোও আমাদের হাসপাতালে করানো সম্ভব হবে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং অন্য দিনগুলোতে জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্ট উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারসহ একজন করে এমবিবিএস মেডিকেল অফিসার সার্বক্ষণিক রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রাখা হচ্ছে পলাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ হাসাপাতালে কনসালটেন্ট ২ জন আর.এম.ও ১ জনসহ মোট ১০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং ৩৬ জন নার্স রয়েছেন রোগীদের সেবায় নিয়োজিত।
পলাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্যান্য সেবার পাশাপাশি ইমার্জেন্সি সার্ভিস, আউট ডোর, ইনডোর, ডেন্টাল, ডিএনসি, মিডওয়াইফ,গাইনি সেবাসহ প্রায়ই সকল ধরনের সেবা প্রদানের সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেন গুপ্তা। এ হাসপাতালে সার্বিক উন্নয়ন ও সেবা প্রত্যাশীদের নিয়ে ভাবনায় আলাপ চারিতায় টিএইচও বলেন, আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই । আমি মনে করি সবই পেয়েছি, মানুষের সেবা দেওয়া ছাড়া আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার একটা ভাবনা যতদিন চাকরি আছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের সেবার মান বাড়িয়ে পলাশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেন গুপ্তা বলেন গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারির পাশাপাশি সিজারিয়ান করতে গেলে প্রাইভেট হাসপাতালে গুনতে হয় অনেক টাকা, যা এখন ফ্রিতে করানো হয় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনি আরো বলেন, মানুষের সেবা হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পলাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন পোস্ট ক্রিয়েট করে একজন মেডিসিন সার্জারি, একজন অর্থপেডিক্স, একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ও একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বিশেষ প্রয়োজন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
একুশে সংবাদ/ন.প্র /এ.জে