ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় এলজিইডির অধীনে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতুর দুই পাশের এপ্রোচ না থাকায় মই ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সুবিদপুর ইউনিয়নের মজকুনী গ্রামের বাইতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত সেতুটি সংযুক্ত করেছে সুবিদপুর ও কুশঙ্গল— এই দুই ইউনিয়নকে। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিলও বুঝে পেয়েছেন। কিন্তু এপ্রোচ ও সংযোগ সড়কের কাজ না হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না।
রবিবার (১৮ মে ) সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থী, পথচারী ও ব্যবসায়ীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে ওঠানামা করছেন বাঁশের সাঁকো বা মই ব্যবহার করে। বাইতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মোসা. হাওয়া আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এপ্রোচের কাজ বন্ধ রয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিপদের মুখে স্কুলে আসছে। অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’
তালতলা বিজি ইউনিয়ন একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র সোহান হাওলাদার বলেন, ‘সেতুটি এক বছর আগে তৈরি হলেও এখনও বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এটি খুবই বিপজ্জনক।’
স্থানীয়রা জানান, তালতলা বাজার এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। প্রতিদিন বহু মানুষ সেতু পার হয়ে বাজারে যান। কিন্তু এপ্রোচ না থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মালামাল নিয়ে ভ্যান কিংবা রিকশা চলাচল সম্ভব নয়। ফলে ঘুরপথে যাতায়াতে সময় ও খরচ বাড়ছে।
সুবিদপুরের বাসিন্দা মো. হানিফ খান বলেন, ‘সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত। বাইতারা অংশে মূল সড়কটি সেতুর কার্নিশ দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। যতক্ষণ না দুই পাশে সংযোগ সড়ক হয়, ততক্ষণ এই সেতুর সুফল মিলবে না।’
জানা গেছে, ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ঠিকাদার মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদারের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স’ সেতুটি নির্মাণ করেছে। কিন্তু এপ্রোচের কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে উধাও। সর্বশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট তাকে এলাকায় দেখা গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবীর বলেন, ‘ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যোগাযোগের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন হলে আমি নিজেই সাইট পরিদর্শনে যাব।’ তবুও রিপোর্ট কইরেন না! কাজ অসমাপ্ত থাকা সত্ত্বেও পুরো বিল কীভাবে পরিশোধ হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিকিউরিটি মানি এখনো আছে।’ প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে অপারগতা জানান।
এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী (এস.এ.ই) মো. মইনুল আজম বলেন, ‘সেতুর এপ্রোচে দ্রুত বালু ভরাট করে দেওয়া হবে। নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা।’ তিনি জানান, তিনি ছুটিতে আছেন এবং কাগজপত্র না দেখে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধও জানান তিনি।
উপকারভোগীরা দ্রুত সেতুর দুই পাশে এপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/ ঝা.প্র/এ.জে