প্রকৃতিতে বসন্ত আর গ্রীষ্মের সন্ধিক্ষণে কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুনজ্বলা সৌন্দর্যে রাঙিয়ে উঠেছে ফরিদপুর। প্রচণ্ড দাবদাহের মাঝেও কৃষ্ণচূড়ার শাখা-প্রশাখায় লাল ফুলের ছটায় ঢেকে গেছে গাছ, পথ আর প্রকৃতি। পথচারীদের নজর কাড়ছে এ রক্তিম দৃশ্য, ছড়িয়ে দিচ্ছে এক রূপকথার মত অনুভব।
জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল—ফরিদপুরের সর্বত্রই কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ পথচারী, শিশু থেকে বৃদ্ধ। বাসাবাড়ির আঙিনা, স্কুল, কলেজ, অফিস চত্বর, এমনকি মহাসড়ক—সব জায়গায় কৃষ্ণচূড়া গাছ যেন প্রকৃতির এক সজীব ক্যানভাস।
সরেজমিনে মাজকান্দি-মধুখালী সড়ক ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, থোকায় থোকায় ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলে গাছের ডালপালা নুয়ে পড়েছে। সবুজ পাতার মাঝে রক্তিম ফুলের রঙিন আভা—দূর থেকে মনে হয় প্রকৃতি যেন আগুন রাঙা ময়ূরের পেখম মেলে ধরেছে।
কৃষ্ণচূড়া যার ইংরেজি নাম Flame Tree এবং বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia। এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত বৃক্ষ। এর চমৎকার পত্র-পল্লব ও আগুনলাল ফুল একে আলাদা সৌন্দর্য দেয়। বসন্তের শেষ দিকে এই ফুল ফুটতে শুরু করে এবং গ্রীষ্মের শুরু থেকে বর্ষা পর্যন্ত প্রকৃতিকে করে তোলে লালাভ রঙে মাখা।
প্রাকৃতিক শোভা বর্ধন ছাড়াও কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ ছায়াদানের জন্যও সমাদৃত। সাধারণত এর উচ্চতা ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে, কিন্তু বিস্তৃত শাখা-প্রশাখায় এর সৌন্দর্য আরও বহু গুণ বেড়ে যায়।
সোমা শীল নামের এক গৃহবধূ বলেন, “কৃষ্ণচূড়ার লাল ও হলুদ রঙের ফুল আমাদের মুগ্ধ করে। লালকে আমরা কৃষ্ণচূড়া আর হলুদকে রাধাচূড়া বলে থাকি। তবে রাধাচূড়া এখন তেমন দেখা যায় না।”
তরুণীরা কাকলী, আসমা ও সরলা জানান, “গ্রামাঞ্চলে এখন কৃষ্ণচূড়ার লাল আভা চোখে পড়ে। মনে হয় প্রকৃতি নতুন রূপে সেজেছে।”
সন্দীপন চক্রবর্ত্তী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “কৃষ্ণচূড়া শুধু শোভাময় বৃক্ষই নয়, এর ভেষজ গুণও রয়েছে। আমরা সবাই মিলে এই গাছ রোপণ করে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করতে পারি।”
প্রকৃতি তার নিজস্ব ছন্দে প্রতিটি ঋতুকে স্বাগত জানায়, আর কৃষ্ণচূড়া সেই ছন্দে যোগ করে রঙের উৎসব। এমন রক্তিম সৌন্দর্য আমাদের শুধু চমক দেয় না, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাও বাড়িয়ে দেয়। এই প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের উচিত আরও বেশি করে পরিবেশবান্ধব বৃক্ষরোপণ করা।
একুশে সংবাদ/ফ.প্র/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :