চট্টগ্রাম র্যাব-৭ কার্যালয়ে নিজ অফিস কক্ষে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার নিজ গ্রামে পৌঁছলে শোকের ছায়া নেমে আসে তাড়াশী এলাকায়। স্বজন, প্রতিবেশী ও সহপাঠীদের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
সকাল ১০টায় র্যাব-৬ এর কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম ফ্রিজারে করে পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসে তার গ্রামের বাড়ি তাড়াশীতে। সেখানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা সাড়ে ১০টায় পৌরসভার পার্শ্ববর্তী পাড়কোনা মহাশ্মশানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
পলাশ সাহার বড় বোন রমা সাহা, বড় ভাই লিটনের স্ত্রী ও মেজ ভাই নন্দলাল সাহার শোকার্ত আর্তনাদে পরিবেশ আরও ভারী হয়ে ওঠে।
নন্দলাল সাহা বলেন, “তিন ভাই এক বোনের মধ্যে পলাশ ছিল সবার ছোট ও খুবই আদরের। ওর সব অর্জনই আমাদের গর্বের উৎস ছিল। কিন্তু সে নিজেই চলে গেল, আমাদের সব শেষ করে দিল।”
তিনি আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা পলাশ সাহা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সর্বশেষ তিনি র্যাব-৭–এ কর্মরত ছিলেন।
দুই বছর আগে তিনি সুস্মিতা সাহার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি। স্ত্রী ও মায়ের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন পলাশকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে বলে জানান তার পরিবার।
পলাশ সাহার বাল্যবন্ধু ইকবাল হাসান বলেন, “পলাশ খুব মেধাবী ও আন্তরিক মানুষ ছিল। আমরা তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”
প্রসঙ্গত, গত বুধবার চট্টগ্রামের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতিকালে নিজ কক্ষে যান এএসপি পলাশ সাহা। কিছুক্ষণ পর সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে তার কক্ষে ঢুকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তার পাশে একটি চিরকুট পাওয়া যায়, যেখানে নিজের মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেকেই দায়ী করে যান। চিরকুটে স্ত্রী ও মায়ের প্রতি শেষ বার্তাও উল্লেখ করেন তিনি।
র্যাবের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
একুশে সংবাদ/গো.প্র/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :