জামালপুরের ইসলামপুর পৌর এলাকার আশি উর্ধ্ব বংশীবাদক নিজাম উদ্দিন। মাত্র ১০-১২ বছর বয়সে শখ থেকে বাঁশি বাজানো শুরু করেছিলেন তিনি। সেই শখই এক সময় জীবিকার একমাত্র অবলম্বনে পরিণত হয়। ৬১ বছর ধরে বাঁশির সুরে মুগ্ধ করে চলেছেন মানুষকে, আর সেখান থেকেই চলে তার সংসার।
শুধু বাঁশি বাজানোই নয়, এক সময় নিজ হাতে বাঁশি তৈরি করে হাট-বাজারে বিক্রিও করতেন। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর আগের মতো বাঁশি বানাতে পারেন না। তবুও এখনো তার বাঁশির সুর শুনে বিমোহিত হন স্থানীয়রা।
ইসলামপুর পৌরসভার ফকিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিনের জীবন বেশ চমকপ্রদ। ছোট বয়সেই বাবা-মা তার প্রথম বিয়ে দেন হামিদা বেগমের সঙ্গে। পরবর্তীতে ভালোবেসে আরও একটি বিয়ে করেন ফুলি বেগমকে। দুই স্ত্রীকে নিয়ে এখন কোনো রকমে জীবন যাপন করছেন। সন্তানরা আলাদা হয়ে নিজেরা সংসার করছেন, তাই তাদের তেমন খোঁজ-খবরও রাখেন না। যদিও এ নিয়ে নিজাম উদ্দিনের মনে কোনো অভিমান নেই।
নিজাম উদ্দিন বলেন, “যুবক বয়সে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বাঁশি বাজাতাম। অনেক আয় হতো তখন—দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ওই টাকায় ছেলে-মেয়েদের বড় করেছি। এখন বয়স হয়েছে, শরীর ভেঙে পড়েছে। আগের মতো বাঁশি বাজাতে পারি না। তবুও কিছু জায়গায় গিয়ে বাজাই—যে যা দেয় তাই নিয়েই সংসার চলে।”
তার প্রথম স্ত্রী হামিদা বেগম বলেন, “আগে বাঁশি বানিয়ে বিক্রি করতেন, সংসার ভালোই চলতো। এখন বয়স হয়েছে, অসুস্থ থাকেন, আগের মতো আর কিছুই পারেন না। সরকারিভাবে আগে কিছু অনুদান পেতেন, এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। কষ্টে দিন পার করছি।”
স্থানীয়রা জানান, নিজাম উদ্দিন এলাকার একজন পরিচিত মুখ। হাট-বাজার, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড কিংবা মেলায়—যেখানেই বাঁশির সুর বেজে ওঠে, বুঝে নিতে কষ্ট হয় না তিনি নিজাম উদ্দিন। তার বাঁশির সুরে অনেক পথচারী মুগ্ধ হন, কেউ কেউ তার গান শুনে কিছু অর্থ সহায়তাও করেন।
তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফুলি বেগম বলেন, “আমি তার বাঁশির সুরে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, জানতাম স্ত্রী-সন্তান আছে, তবুও তাকে বিয়ে করেছি।”
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুর রহমান বলেন, “নিজাম উদ্দিনের বিষয়ে অবগত হয়েছি। তার অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি যাচাই করে দ্রুতই তার জন্য যথাযথ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।”
বাঁশির সুরে জীবনের গল্প বলা মানুষ নিজাম উদ্দিন যেন এই শেষ বয়সেও কিছুটা শান্তি পেতে পারেন—এটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
একুশে সংবাদ/জা.প্র/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :