পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দারছিড়া নদীতে সেতু না থাকায় বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নৌকাই একমাত্র ভরসা হওয়ায় চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
দুই ইউনিয়নের মানুষদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবায়ন হয়নি একটি সেতুও। নৌকা বা ট্রলারে করে পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে পড়ছেন শিক্ষার্থী, রোগী, কৃষক ও সাধারণ মানুষ।
পর্যটনের সম্ভাবনা, কিন্তু নেই নিরাপদ সেতু:
মৌডুবী ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা মো. আজিজুর রহমান সুজন জানান, এখানেই অবস্থিত জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত—যেখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ একটি সেতুর অভাবে সেভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠছে না।
“একবার কেউ এলে দ্বিতীয়বার আসতে চায় না, কারণ নদী পার হতে গিয়ে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা কল্পনার বাইরে,” বলেন তিনি।
ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা:
সিয়াম, চরহালিম গ্রামের একাদশ শ্রেণির ছাত্র, জানায়—প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে কলেজে যেতে হয়। নারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক সময় ঘাটে নৌকা না থাকলে কলেজে দেরিতে পৌঁছতে হয়।
জাহাগিরিয়া শাহসূফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শাহিন মাহমুদ বলেন, বর্ষায় নদী উত্তাল হলে অভিভাবকরা সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাতে চান না।
প্রশাসনের ভাষ্য ও আশ্বাস:
রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান জানান, দারছিড়া নদীর ওপর ২৮০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) এবং সার্ভে শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, “বুয়েটের প্রকৌশলীরা এলাকা পরিদর্শন করেছেন, একনেকে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদের দাবি:
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসাইন জানান, সেতু নির্মাণে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
রাকিবুল ইসলাম, উপজেলার যুব ফোরামের সভাপতি বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এখানে একটি সেতু জরুরি।”
দারছিড়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ কেবল যোগাযোগই নয়, শিক্ষাব্যবস্থা, পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে—এমনই বিশ্বাস এলাকাবাসীর। তবে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ না নিলে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে না দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই সম্ভাবনাময় জনপদ।
একুশে সংবাদ//প.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :