হাটহাজারী সদরের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগের তদন্ত করেছেন সীতাকুণ্ডের আরেক সাবরেজিস্ট্রার মো.ইউসূফ আলী মিয়া।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এ তদন্ত কার্যক্রম চলে।
জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় গত ১৮ অক্টোবর সিলেট কারাগারে বন্দি হন হাটহাজারী সদরের সাব-রেজিস্ট্রার পারভীন আক্তার। পরে সাব-রেজিস্ট্রার পারভীন আক্তার গত ২৫ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পেয়ে ২৯ অক্টোবর রবিবার থেকে পুনরায় অফিস শুরু করেন। ২০২১ সালের ১৮ জুন পারভিন আকতার হাটহাজারী সদর সাব রেজিস্ট্রার হিসাবে যোগদানের পর ওই অফিসের সহকারী দিদারুল আলমের যোগ সাজসে সরকারি নিয়ম লংঘন করে দলিল রেজিস্ট্রেশনসহ নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। পরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৬ এর রাস্ট্রপতির আদেশক্রমে সচিব গোলাম সরোয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে হাটহাজারী সাব- রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার (সিলেট জেলা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার) পারভীন আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার সাময়িক বরখাস্তের অনুলিপি সদয় জ্ঞাতার্থে মহাপরিচালক নিবন্ধন বরাবরে স্মারক নং ১৮৯১ ( ৪) গত ২৬ অক্টোবর প্রেরন করা হয়েছিলো।
এদিকে গত ১০ অক্টোবর সাব-রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতিতেই হাটহাজারী সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস সহকারী দিদারুল আলম ২০টি দলিল নিবন্ধন করেছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত ২৫ অক্টোবর হাটহাজারী সাব-রেজিস্টার অফিস পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্টার মিশন চাকমা। পরে গত ১৫ অক্টোবর রেজিস্ট্রি দেখানো ২০টি দলিল জব্দ করা হয়। সাব-রেজিস্টারের অনুপস্থিতিতে দলিল নিবন্ধনের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছেন বলে তখন জানিয়েছিলেন জেলা রেজিস্টার। (বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো) ।
একটি সূত্রে জানা যায়, সেই বিষয়টি তদন্তে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। মঙ্গলবার সকালে সেই কমিটি বিষয়টির তদন্তের জন্য ওই ২০ টি দলিলের দাতা-গ্রহীতাদের উপস্থিত হতে নোটিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সীতাকুণ্ডের সাব রেজিস্ট্রার। তবে সকাল ১১ টার দিকে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তদন্ত করতে এসেছেন শুধুমাত্র সীতাকুণ্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্টার মো. ইউছুপ আলী মিয়া। এসময় একই কক্ষে পাশাপাশি অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার পারভীন আক্তার কে এবং ১৫/২০ জন দলিল লেখক (মুন্সি) কে একসাথে দেখা গেছে।
তদন্ত কমিটিতে আর কে কে আছেন, কে কে আসছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, "কমিটির আর কেউ আসেননি, কেন্দ্র থেকে তাকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে । পরে অভিযুক্তের সামনে তদন্ত কার্যক্রম কি সঠিক হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযুক্তের সামনে তদন্ত করা হচ্ছে না, তাকে প্রয়োজনে এখানে ডাকা হয়েছে ।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তিরা এ প্রতিবেদক কে জানান, অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার পারভীন আক্তারের পক্ষে সাফাই গাইতে প্রায় ২০ জন মুন্সির লিখিত মতামত নেওয়া হয়েছে। দলিল দাতা ও গ্রহীতাদের নোটিশ করা হয়েছে বেশির ভাগ দাতা গ্রহীতা উপস্থিত হলে তাদের মতামত নেওয়া হবে বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নকল নবিশ ও অফিস কর্মচারী এ প্রতিবেদক সহ উপস্থিত সংবাদকর্মীদের নিকট বরখাস্তকৃত সাব রেজিস্ট্রারকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তদন্ত কর্মকর্তা কৌশলে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সীতাকুণ্ডের সাব রেজিস্ট্রার মোঃ ইউসুফ আলী মিয়া গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "কারো কাছ থেকে জোর পূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া যায় না।"
তদন্তে কোন অনিয়ম পাওয়া গেছে কিনা প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, "তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে ।"
একটি সূত্র জেলা কর্মকর্তা, রাউজান ও ফতেয়াবাদ সাব রেজিস্ট্রার এই কমিটিতে থাকার কথা ছিলো বলে জানা গেছে। তবে এই তদন্ত কর্মকর্তা এ তদন্ত কমিটি এক সদস্য বিশিষ্ট বলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।
এদিকে এক সহকর্মীর অনিয়মের তদন্ত অন্য সহকর্মীর মাধ্যমে করলে সেই তদন্ত কতটুকু সঠিক হবে এ নিয়েও বিজ্ঞমহল প্রশ্ন তুলেছেন। তাছাড়া এই তদন্তের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :