AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মানবেতর জীবন যাপন করছেন নৌকার মাঝিরা


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০২:৪১ পিএম, ১৮ আগস্ট, ২০২১

মানবেতর জীবন যাপন করছেন নৌকার মাঝিরা

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে টাবুরে নৌকা সহ মালবাহী নৌকা। আধুনিক সভ্যতায় এসে বর্তমানে সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হওয়ায় ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের দখলে চলে যাচ্ছে সবকিছুই। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের ঐতিহ্য নানা নামের বাহারি নৌকা। নদী থেকে নৌকার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন নৌকার সাথে জড়িত মাঝি পরিবারের সদস্যরা। শীতলক্ষ্যা,বুড়িঙ্গগা,দলাদীয়া মাটিকাটা,ধারত্রী,সালদহ্ নদীর খেয়া ঘাটের মাঝিরা এখন তাদের আদি পেশা পাল্টিয়ে ফেলছেন। মাছধরা, গাছ কাটা, ধান কাটাসহ দৈনিক শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছেন তারা।

গাজীপুরের সকল উপজেলাতে এক সময় জনসাধারনের চলাচলের মাধ্যম ছিল নৌকা। কৃষক তার নিত্য প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারতে নৌকা করে যাতায়াত করতেন। নদী বেষ্টিত গ্রাম গঞ্জে বিবাহ কাজে ব্যবহার হতো নৌকা। নৌকায় করে জামাই মেয়ে নিয়ে আসা সহ বিবাহের কাজ সম্পন্ন করতে বরযাত্রী আসতো নৌকায় করে।

কাপাসিয়া,বরমী, বড়মা, ত্রীমোহনী,রানীগঞ্জ,সালদহ্ গোসিংগা,নান্দিয়াসাংগুই, কাওরাইদ ব্যবসায়ীরা বড় বড় বন্দর থেকে নৌকায় করে তাদের ব্যবসার জন্য মালামাল আনা নেওয়া করতেন। মাটিকাটা,শিতলক্ষ্যা,ধারত্রী  নদীর সুবিশাল বুক জুড়ে ছিল নৌকার অবাধ বিচরণ। স্থানে স্থানে নদীর থৈ থৈ রূপালি পানির ধারে ছিলো খেয়া পারাপারের মুখরতা। ঘাটে ঘাটে সারাক্ষণ ছিল বৈঠা ও জলের  শব্দ। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

যান্ত্রিক সভ্যতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা। বিলিন হয়ে যাচ্ছে নদী। ফুরিয়ে গেছে মাঝিদের সোনালি দিন। একসময় নদীর  পাড়ের মানুষের সাথে নৌকার সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। নদী তীরের বাসিন্দাদের জীবনের জন্য ছিল নৌকার নিবিড় সম্পর্ক। হাটবাজার যাতায়াত থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠানেরও একমাত্র বাহন ছিল পালতোলা নৌকা। আগের দিনে উন্নত সড়কপথ না থাকায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেও নৌকা ছিল একমাত্র ভরসা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায,একসময় শীতলক্ষ্যা,বুড়িঙ্গগা,দলাদীয়া মাটিকাটা,ধারত্রী,সালদহ্ নদীকে ঘিরেই হাজারো মানুষের জীবনজীবিকা, স্বপ্ন, ভালোবাসা, বেঁচে থাকা। একসময় নদীর দুই পাড়ে কয়েক শ’ ঘাট ছিল। এসব ঘাট দিয়ে নৌকায় চড়ে পারাপার হত যাত্রীরা। এখন সেই দিন আর নেই। গাজীপুরের সিমীত কিছু জায়গায়  নৌ পারাপার এখনো কিছুটা সচল থাকলেও অনেক  মাঝিরা পেশা পাল্টাচ্ছেন। অধিকাংশ নৌকার মাঝি পেশা পাল্টিয়ে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই সব কথা বলেন বরমী শীতলক্ষ্যা খেয়া ঘাটের মাঝি শ্রী শ্রী পরিমল চন্দ্র বর্মন (পরস)। নির্বাচন এলে সব সময় জনগণের পাশে থাকাসহ কত প্রতিশ্রæতিই না দেন নেতারা। আবার নির্বাচন না আসা পর্যন্ত তাঁদের আর জনগণের খবর নেওয়ার দরকার পড়ে না। চলমান করোনায় বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হলো। এই সংকটময় মুহৃর্তেও শিতলক্ষ্যাঘাটের মাঝিদের পাশে নেই কোনো নেতাই। করোনার প্রাদুর্ভাবের এই দুঃসময়ে নেতাদের পাশে না পেয়ে এলাকাবাসীর মুখে মুখে এমন কথা শোনা যাচ্ছে।

এখন এসব এলাকায় খেয়া পারাপার নেই বললেই চলে। কাপাসিয়া,বরমী, বড়মা, ত্রীমোহনী,রানীগঞ্জ, গোসিংগা,নান্দিয়াসাংগুই,কাওরাইদ,কালিয়াকৈর,ফুলবাড়িয়া এসব ইউনিয়ন দিে বয়ে যাওয়া নদী এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই সেখানেও টিকে থাকতে পারছেন না তারা।  নদীর খেয়াঘাটের মাঝিদের এখন চরম দুর্দিন চলছে। ছোটবড় খেয়াঘাট সহ নদীতে  নৌকা চলাতে না পারায় কয়েক শতাধিক মাঝি পরিবারে চলছে অভাব অনটন। কিছু ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মালামাল পরিবহনেও এখন তাদের ডাক পড়ে না। আগের মতো তাদের নৌকায় চড়ে কেউ আর নদী পারাপার হচ্ছে না। তবুও যাত্রীর আশায় কেউ কেউ নদীঘাটে অলস সময় পার করছেন।

বরমী খেয়া ঘাটের মাঝি মন্নান তারিফ ও পরিমল চন্দ্র বর্মন (পরস) জানান, তারা প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ এই নদীতে নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করছে। কেউ মন চায়লে টাকা দেয় আবার কেউ কেউ না দিয়েও চলে যায়। নদীর দুই পার দখল আর ভরাট হয়ে নদী ছোট হয়ে গেছে। অনেক নদীর উপর ব্রীজ হয়ে যাওয়ায়  নৌকার কদর কমে গেছে। অনেক স্থানে ব্রীজ হওয়ায় এখন আর তেমন নৌকার ভাড়া নেই। আয় উপার্জন আগের মতো আর হয় না। অন্যদিকে বেশির ভাগ মাঝি মহাজনদের কাছ থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে নদীতে চালাতে হয়। মালিকরা নৌকা ভাড়া আগের তুলনায় অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া এখন ঘাট মালিকদের টোল প্রদান ও মালিকের নৌকা ভাড়া প্রতিদিন পরিশোধ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

মাঝি মন্নান জানান,রুটি রুজির তাগিদে মাঝিরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোদ বৃষ্টি ঝড়, ঝড়–তুফান উপেক্ষা করে নৌকা চালিয়ে যা উপার্জন করে তার বেশির ভাগই নৌকা মালিক ও ঘাট মালিকদের পাওনা বাবদ পরিশোধ করতে হয়। এতে অবশিষ্ট আয়ের অংশ দিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য। মাঝিপাড়ার এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন শুধু সরকারি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমেই ব্যস্ত। করোনায় কর্মহীন শ্রমজীবী ও অসহায় মানুষের পাশে নেই।  ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে অনেক সংগঠন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু মাঝিদের খবর কেও নেয়নি।

বরমী বাজার ব্যবসায়ী গোপাল দাস বলেন,মাঝিদের অনেকেই তাদের বাপদাদার এ পেশায় অনেক  বছর যাবত জড়িয়ে রয়েছেন। তাদের উপায় নেই জেনেও অনেকে এই পেশা ছাড়তে পারছেন না। আবার জীবিকার তাগিদে অনেকে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঝিদের মধ্যে অনেক পরিবার ভূমিহীন। তাছাড়া এদের কোন ঋণেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল  বলেন, নৌকা  ছিল এই এলাকার আদি বাহন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিনচালিত নৌকা রয়েছে। তাই বলে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ভুলে গেলে চলবে না। সেই নৌকার  কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শামসুল আরেফিন জানান,মাঝিদের নামের কোন তালিকা আমাদের কাছে নেই। সরকার যদি তাদেরকে সহায়তা দেন তাহলে এবিষয়ে আমরা কাজ করবো। সরকারি ভাবে তাদেরকে কোন সহায়তা দেওয়া হয়না।


একুশে সংবাদ/সনি/আর

Link copied!