প্রাচীন নাম হারানো মসজিদ। প্রাচীনতম এই মসজিদ এর নতুন নামকরণ করা হয়েছে 'জামেয়-আস সাহাবা' জামে মসজিদ। ইসলাম প্রচারের প্রাচীনতম নিদর্শন সমূহের মধ্যে অন্যতম হারানো জামে মসজিদ। বহুদিন ধরে একটি পতিত জঙ্গল ছিল আর সেই জঙ্গলে পাওয়া যায় ৬৯ হিজরি সনে নির্মিত বহু বছর আগের মসজিদ, মসজিদটির কেবল ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট থাকায় জেলার লোক সমাজে এই মসজিদটিকে স্থানীয়ভাবে হারানো মসজিদ নামে পরিচিত।
এই মসজিদকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে মনে করা হয়। মসজিদটির এর অবস্থান রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র ১ কি.মি. দক্ষিণে লালমনিরহাটের সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায়।
মসজিদের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া একটি ইটের মধ্যে আরবিতে স্পষ্টভাবে লেখা কালেমা তাইয়্যেবা ও ৬৯ হিজরি সন। এতে স্থানীয়রা ধারণা করেন যে, আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃতু্র ৫৮ বছর পরে আরবি ৬৯ হিজরী অর্থাৎ ইংরেজি ৬৮৯ থেকে ৬৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গড়ে তোলা হয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় এলাকা আর এই মসজিদটি।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৭ সালে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম রামদাস গ্রামে মসতের আড়া নামক জঙ্গলাচ্ছন্ন একটি স্থানের মাটির ঢিবি কেটে সমতল করার সময় প্রাচীন এ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন জমির মালিক আব্দুল গফুরসহ স্থানীয়রা। পরে সেখান থেকে ইট ওঠানো বাদ দিয়ে মাটি সরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট ভিতরের ১৩ফিট বাই সারে ৯ফিট, আর ৪মিনার এক গুম্বুজ। একটি মসজিদের ভিত্তি সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়। যার দেওয়ালের পুরুত্ব ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এর একটি দরজা এবং ঘরের চারকোণে ৮ কোণবিশিষ্ট ৪টি স্তম্ভ রয়েছে। তাছাড়াও তলিয়ে যাওয়া মসজিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে কারুকার্যময় ইট এবং গম্বুজের চূড়াও পাওয়া গেছে।
তবে লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, ৬শ' থেকে ৭শ' খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রামদাস গ্রামে চকচকার বিল নামে একটি প্রসিদ্ধ নদীবন্দর ছিল। সে সময় আরব বণিকরা বাণিজ্যের জন্য এ নদী পথ দিয়ে ভারত উপমহাদেশে আসতেন। তাই এ বন্দর ঘিরে সেখানে মসজিদটি নির্মিত হতে পারে। ১৯৮৭ সালে মসজিদটি পুনঃরুদ্ধারের পর থেকেই সেখানে নামাজ পড়ে আসছেন স্থানীয়রা। প্রাচীন এ মসজিদটি দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এখানে ভিড় করছেন। বর্তমানে প্রাচীন এ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষের চারপাশ ঘিরে একটি সুদৃশ্য মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ চলছে।
এই হারানো মসজিদের নিয়মিত মুসুল্লি আবদার রহমান জানান, কিছুদিন আগেও এখানে জঙ্গলের বিরাট একটি স্তুপ ছিল। জঙ্গল কেটে মসজিদ আবিস্কারের পর এবং লোক মুখে এই হারানো মসজিদ আবিস্কারের কথা মুহুর্তের মধ্যে প্রচার হওয়ার কারনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে মসজিদটি দর্শন করতে আসে। অনেকে নিয়ত করে এখানে মিলাদ মাহফিলের আয়েজনও করে থাকে।
অপর শিশু মুসুল্লি এলহাম চৌধুরী জানান, আমাদের এখানে এই মসজিদটি হওয়ার পর থেকেই আমরা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারছি। এক সাথে নামাজও পড়ি। এখানে আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েরা আরবী শিখতে পারছি। আমার খুব ভাল লাগে।
মসজিদের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, কতো হাজার বছর আগে এই মসজিদটি নির্মান হয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এই মসজিদটি এলাকার লোকজন আবিস্কার করার পর হতেই দুর দুরান্ত হতে লোকজন এখানে নামাজ এবং মসজিদটি দর্শন করতে আসে। বর্তমানে এই প্রাচীনতম মসজিদকে ঘিরে মাদ্রাসা ও লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে এবং পাশাপাশি গড়ে উঠেছে তিনটি শাখা হেপজো, কওমি ও নুরানি মাদরাসা শাখা।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর জানান, ৬৯ হিজরি সনের আরও কিছু আগে এই মসজিদটি নির্মিত হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তিনি লালমনিরহাটে যোগদানের পর হতেই মসজিদটিকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের দিন মসজিদের ভিতরে যায়গার সংকুলান হওয়ায় বর্ততমানে মসজিদটির পরিধি বাড়ানোর কাজ চলছে।
একুশে সংবাদ/জ/আ