AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভুট্টা চাষের সঠিক পদ্ধতি


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
১২:৪৬ পিএম, ১৪ জুলাই, ২০২১
ভুট্টা চাষের সঠিক পদ্ধতি

আমাদের দেশে ভুট্টা বা কর্ন অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি খাবার। ভুট্টার মোচা পুড়িয়ে খাবার প্রচলন চলে আসছে বহুকাল ধরেই। আধুনিক জীবনেও ভুট্টা তার নিজ গুণে ঠাঁই করে নিয়েছে নানা রূপে নানা স্বাদে। ভুট্টার খই বা পপকর্ন কখনও খায়নি অথবা খেয়ে পছন্দ করেনি এমন মানুষ আজকাল আর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

ভুট্টার  ভিটামিন এ সি ও লাইকোপিন ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধী ফাইবার এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি জোগায়। ভুট্টা ডায়াবেটিস ও রক্তের  উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, আমাদের হৃৎপি- ও কিডনির সুরক্ষা করে।  চমৎকার স্বাদ আর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ খাবারটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর ধরেই জন্মানো সম্ভব। 

ভুট্টার জাতঃ
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪ জাতটি উচ্চ ফলনশীল। রবি মৌসুমে ১০.৮৪ টন/হেক্টর এবং খরিফ মৌসুমে ১০.৫২ টন/হেক্টর। দুর্যোগ আবহাওয়ায় সহজে হেলে ও ভেঙ্গে পড়ে না। রবি মৌসুমে সিল্কিং পিরিয়ড ৯৫ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৫৫ দিন। গাছের গড় উচ্চতা রবি মৌসুমে ১৮৪ সেমি এবং খরিফ মৌসুমে ১৬০ সেমি। জাতটির দানা সাদা বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির। উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল (৩৫ক্কসে)। পাতাঝলসানো রোগপ্রতিরোধী। বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫ জাতটি উচ্চ ফলনশীল। রবি মৌসুমে ১২.৭৫ টন/হেক্টর এবং খরিফ মৌসুমে ১২.০৭ টন/হেক্টর। রবি মৌসুমে সিল্কিং পিরিয়ড ৯৫ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৫৫ দিন। গাছের গড় উচ্চতা রবি মৌসুমে ২১৪ সেমি এবং খরিফ মৌসুমে ১৬৫ সেমি। পরিপক্ক কালে গাছের পাতা সবুজ থাকে। উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল (৩৫ক্কপ)। পাতা ঝলসানো রোগ প্রতিরোধী। উৎপাদন প্রযুক্তি মাটি: বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।

বপনের সময়ঃ
বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য-অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

বীজের হার ও বপন পদ্ধতি:
হাইব্রিড ভুট্টার বীজ হেক্টরপ্রতি ২০-২২ কেজি। বীজ সারিতে বুনতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ সেমি। সারিতে ২৫ সেমি দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেমি দূরত্বে ২টি গাছ রাখতে হবে। সারের পরিমাণ: ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হল।

পরিমাণ/হেক্টর সারের নাম কম্পোজিট হাইব্রিড রবি খরিফ রবি ইউরিয়া ১৭২-৩১২ কেজি ২১৬-২৬৪ কেজি ৫০০-৫৫০ কেজি টিএসপি ১৬৮-২১৬ কেজি ১৩২-২১৬ কেজি ২৪০-২৬০ কেজি এমপি ৯৬-১৪৪ কেজি ৭২-১২০ কেজি ১৮০-২২০ কেজি জিপসাম ১৪৪-১৬৮ কেজি ৯৬-১৪৪ কেজি ২৪০-২৬০ কেজি জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি ৭-১২ কেজি ১০-১৫ কেজি বরিক এসিড ৫-৭ কেজি ৫-৭ কেজি ৫-৭ কেজি
(প্রয়োজন বোধে) গোবর ৪-৬ টন ৪-৬ টন ৪-৬ টন।

বীজ বপনের হার ও দূরত্বঃ
শুভ্রা, বর্ণালী ও মোহর জাতের ভুট্টার জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ কেজি এবং খইভুট্টা জাতের জন্য  ১৫ থেকে ২০ কেজি হারে বীজ প্রয়োজন হবে। ভুট্টার  বীজ সারিতে বুনতে হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির  দূরত্ব ৭৫ সেন্টিমিটার এবং সারিতে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুইটি গাছ রাখতে হবে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে অনুমোদিত ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

সেচ প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। উদ্ভাবিত জাতে নিন্মরুপ ৩-৪টি সেচ দেওয়া যায়।

প্রথম সেচ: বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে (৪-৬ পাতা পর্যায়)।
দিতীয় সেচ: বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে (৮-১২ পাতা পর্যায়)।
তৃতীয় সেচ: বীজ বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়)।
চতুর্থ সেচ: বীজ বপনের ৮৫-৮৯ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার পূর্ব পর্যায়)।

ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোন ক্রমেই জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনাঃ
ভুট্টায় সাধারণত যেসব রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বীজ পচা ও চারা গাছের রোগ। নানা রকম বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাকের কারণে এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে  ক্ষেতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়। বর্ণালী ও মোহর জাত এ রোগ প্রতিরোধী। জমিতে পরিমিত  রস  ও তাপমাত্রায় (১৩ সেলসিয়াসের বেশি) বজায় রেখে এ রোগের প্রকোপ কমানো যায়। এছাড়াও সুস্থ সবল বীজ ব্যবহার এবং বীজ শোধন করে আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। বীজ শোধনের জন্য থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) ২.৫ থেকে ৩.০ গ্রাম/কেজি হারে মিশিয়ে নিতে হবে।

পাতা ঝলসানো রোগ ভুট্টার আরেকটি ছত্রাকজনিত রোগ। আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় প্রথমে লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরে গাছের উপরের অংশে তা বিস্তার লাভ করে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে পাতা সময়ের আগেই  শুকিয়ে যায়, শেষ পর্যন্ত গাছ মরে যায়। মোহর জাতটি এ রোগ প্রতিরোধী। এ রোগের জীবাণু অনেক দিন বেঁচে থাকে এবং বাতাসের সাহায্যে তা ছড়ায় বলে ফসল সংগ্রহের পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে ফেলতে হবে। পুড়িয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়। রোগের আক্রমণ দেখা গেলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছত্রাকজনিত রোগ মোচা ও দানা পচা রোগ যা ভুট্টার ফলন কমায় সেই সাথে কমায় বীজের গুণাগুণ ও খাদ্যমান। মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়। দানা অপুষ্ট থাকে ও বিকৃত হয়ে যায় এবং সেখানে ছত্রাকের উপস্থিতি অনেক সময় খালি চোখেই দেখা যায়। গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত সময়টায় যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি থাকে তা হলে আক্রমণ বাড়ে। একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ বর্জন করতে হবে কারণ  জীবাণু বীজ অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। গাছ মাটিতে পড়ে গেলে এ রোগ বেড়ে যায় বলে এদিকে সতর্ক দৃষ্টি  দিতে হবে। পরিপক্ব ভুট্টা দ্রুত সংগ্রহ করে পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ভুট্টার কা- পচা রোগও বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক ঘটিয়ে থাকে। এতে কা- পচে গিয়ে গাছ ভেঙে পড়ে। ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে লাগিয়ে এবং নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করে রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। এছাড়াও ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেও সতর্ক হওয়া জরুরি। চারা অবস্থায় যদি কাটুই পোকার আক্রমণ দেখা দেয় তা হলে কীড়াগুলো মেরে ফেলতে হবে। ভোর বেলা কাটা গাছের গোড়া খুঁড়ে এদের মারা যায়। আরেকটা উপায় হচ্ছে সেচ দেয়া। তাহলে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা কীড়া মাটির ওপর আসে তখন পাখির সাহায্যে বা হাত দিয়ে মেরে এদের দমন করা যায়। কাটুই পোকার জন্য বালাইনাশক হিসেবে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ৫ মিলিলিটার ডারসবান/পাইরস ২০ ইসি মিশিয়ে চারা গাছের গোড়ায় স্প্রের করে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। শক্ত কাণ্ডে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে  মার্শাল ২০ ইসি বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানির সাথে ২ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে পাতা ও কাণ্ড ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ভুট্টা পুষ্ট ও পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে। মোচা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যায়। ভুট্টার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি কম্পোজিট জাতে গড়ে ৪ থেকে ৫.৫ মেট্রিক টন, হাইব্রিড জাতে ৮ থেকে ১১ মেট্রিক টন এবং খই ভুট্টার ফলন হেক্টরপ্রতি গড়ে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন। বীজ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা বেছে নিতে হবে। যত্নে উৎপাদন করা এ ভুট্টাকে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে খুব যত্ন করে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করে সমৃদ্ধি আনতে আমাদের হয়তো আর খুব বেশি দিন  অপেক্ষা করতে হবে না।

ভুট্টা সংগ্রহঃ
দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছাড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।

 

একুশে সংবাদ/বর্না

Link copied!