হিলারির ই-মেইল বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ।
একুশে সংবাদ: যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ই-মেইল ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব লিখিতভাবে দিতে হবে। জুডিশিয়াল ওয়াচ নামের একটি রক্ষণশীল সংস্থার অনুরোধের ভিত্তিতে দেশটির ফেডারেল আদালত গতকাল শুক্রবার এই রায় দিয়েছেন।
২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় হিলারি ক্লিনটন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নিরাপদ সার্ভার ব্যবহারের বাইরে ব্যক্তিগত সার্ভারেও ই-মেইল আদান-প্রদান করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এতে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচার হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান নেতৃত্ব দুই বছর ধরে হিলারির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ, তদন্ত ও শুনানি করে গেছে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) প্রধান জেমস কোমি গত মাসে কংগ্রেসকে জানান, নিজস্ব সার্ভারে ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বার্তা আদান-প্রদানের কাজটি দায়িত্বজ্ঞানহীন। তবে সে কারণে হিলারির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ আনা সংগত নয়।
কোমির এই বক্তব্যে হিলারি কাঠগড়ায় ওঠা থেকে বেঁচে যান। তবে তাঁর ই-মেইল সমস্যা মেটেনি। জুডিশিয়াল ওয়াচ গত মাসে এক আবেদনে জানায়, ই-মেইল ব্যবহার প্রসঙ্গে হিলারি শপথ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য। এই আবেদনের ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে ফেডারেল আদালত বলেন, হিলারিকে ব্যক্তিগতভাবে ভিডিও টেপে ও শপথ নিয়ে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। তবে জুডিশিয়াল ওয়াচ যেসব প্রশ্ন করতে চায় লিখিতভাবে তার উত্তর দিতে হবে।
বিচারপতি এমেট সুলিভ্যানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুডিশিয়াল ওয়াচকে আগামী ১৪ অক্টোবরের মধ্যে হিলারির কাছে তাদের প্রশ্ন পাঠাতে হবে। এর ৩০ দিনের মধ্যে হিলারিকে জবাব পাঠাতে হবে।
এই রায়ের ফলে আগামী ৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে হিলারিকে জবাব পাঠাতে হবে না। ক্যামেরার সামনে জবাবদিহির ঝামেলা থেকেও তিনি বেঁচে গেলেন। তবে রিপাবলিকান পক্ষ নির্বাচনী প্রচারের পুরো সময়ই ই-মেইল নিয়ে বিতর্ক জিইয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে বিপুল অভিজ্ঞতা থাকলেও মার্কিন ভোটারদের চোখে হিলারির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। তিনি ই-মেইল প্রশ্নে নানা সময় নানা বক্তব্য দিয়েছেন। অসতর্কতার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছেন। কিন্তু বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। এই বিতর্ক ব্যবহার করে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারির বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
গতকাল নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হিলারি ক্লিনটন এফবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের পরামর্শে তিনি ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করেন। কলিন পাওয়েল এনবিসি টিভিকে দেওয়া এক বার্তায় সে কথা স্বীকারও করেছেন। তবে তিনি বলেন, শুধু গোপনীয় নয়, এমন ই-মেইলই তিনি এভাবে ব্যবহারের কথা বলেছিলেন।
এই খবর প্রকাশের পর হিলারি নতুন করে সমালোচিত হয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, কলিন পাওয়েলের নাম ব্যবহার করে হিলারি যে যুক্তি দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, পাওয়েল যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, তখন ই-মেইলের ব্যবহার কম ছিল। হিলারি তাঁর বাসভবনে এই ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু পাওয়েল তা করেননি। তা ছাড়া পাওয়েলের সময়ে ই-মেইল ব্যবহার নিয়ে তেমন কড়াকড়ি আইনও ছিল না।
রিপাবলিকান সদস্যদের দাবি মেনে কংগ্রেসে এফবিআই হিলারির সঙ্গে ই-মেইল ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের লিখিত বিবরণ দিয়েছে। রিপাবলিকানরা আশা করছেন, এই সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে, যা হিলারির জন্য বিব্রতকর প্রমাণিত হবে। তবে হিলারির দপ্তর তেমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। উল্টো এই বিবরণ সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে।
একুশে সংবাদ ডটকম // এম // ২০.০৮.১৬
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :