AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইতিহাসের সেরা সিরিয়াল কিলার নারী -বেল গানেস


Ekushey Sangbad

০১:৪৩ পিএম, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
ইতিহাসের সেরা সিরিয়াল কিলার  নারী -বেল গানেস

একুশে সংবাদ : বেল গানেস। জন্ম ১৮৫৯ সালে নরওয়েতে। ইতিহাসে এই সিরিয়াল কিলার নারী ‘ব্ল্যাক উইডো’ নামে পরিচিত। তিনি অন্তত ৪২ জন মানুষকে হত্যা করেছেন। নিহতদের মধ্যে তার স্বামী, বোন, এমনকি সন্তানও ছিল বলে ধারণা করা হয়। মূলত ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম ও মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের খুন করতেন গানেস। খুন করার সময় কেউ দেখে ফেললে সেই প্রত্যক্ষদর্শীকেও হত্যা করতেন তিনি। বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে বিল গানেস ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নরওয়ের ইনবায়েগডা এলাকায় থাকতেন গানেস। ২০০৬ সালে তাকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হয় নরওয়ের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। এতে বলা হয়, ১৮৭৭ সালে একটি নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন গানেস। তিনি তখন গর্ভবতী। ওই অনুষ্ঠানে এক ধনী ব্যক্তি গানেসের পেটে লাথি মারে। এতে অকাল গর্ভপাতে তার সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়। ধনী হওয়ার সুবাদে ওই ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। এরপরই গানেসের মানসিকতায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। পরের বছর গানেস একটি বিশাল খামারে চাকরি নেন। সেখানে তিনি তিন বছর কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পয়সা জোগাড় করেন। ১৮৮১ সালে গানেস পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানে তিনি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গানেসের প্রথম স্বামী সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ১৮৮৪ সালে শিকাগোর ইলিনয়ে ম্যাডস দিতলেভ নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন তিনি। দুই বছর পর সেখানে একটি কনফেকশনারির দোকান খোলেন স্বামী-স্ত্রী। তবে দোকানটি কোনো লাভের মুখ দেখেনি। এক বছর পর রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে দোকানটি পুড়ে যায়। বীমা থাকার সুবাদে ক্ষতিপূরণের টাকা পান ম্যাডস দিতলেভ । ম্যাডস-গানেস দম্পতির ক্যারোলিন, অ্যাক্সেল, মারটেল ও লুসি নামে চার সন্তান ছিল। এদের মধ্যে ক্যারলিন ও অ্যাক্সেল শিশুকালেই মারা যায়। তাদের দুজনেরই মৃত্যু হয়েছিল কোলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে (ডায়েরিয়া, তলপেটে ব্যাথা)। এই দুই শিশুরই জীবনবীমা থাকায় বীমা কোম্পানি ম্যাডসকে অর্থ দিতে বাধ্য হয়। তবে বীমার টাকা হাতে পাওয়ার পরদিনই মারা যান তিনি। প্রথম যে চিকিৎসক ম্যাডসকে দেখেছিল, তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে বিষ দেওয়া হয়েছে। তবে মৃত্যুর পর ম্যাডসের পারিবারিক ডাক্তার জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে। গানেস পরবর্তীতে জানিয়েছিলেন, স্বামীকে তিনিই নিয়মিত ওষুধ খাইয়ে দিতেন। স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরের দিনই তার জীবন বীমার অর্থের জন্য আবেদন করেন গানেস। জীবন বীমা কোম্পানির কাছ থেকে সাড়ে ৮ হাজার ডলার পাওয়ার পর ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের লা পরটিতে একটি বিশাল খামার কেনেন তিনি। ১৯০২ সালের মার্চে গানেস লা পরটিতে যাওয়ার পর সদ্য স্ত্রী বিপত্নিক পিটার গানেসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বেল গানেস। বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় অজ্ঞাত কারণে মারা যায় পিটারের প্রথম স্ত্রীর রেখে যাওয়া শিশু সন্তান। ওই সময় বাসায় একাই ছিলেন বেল গানেস। ওই বছরেরই ডিসেম্বরে এক দুর্ঘটনায় পিটারের মৃত্যু হয়। বেলের দাবি, রান্নাঘরে কাজ করার সময় পিটারের মাথার ওপর সসেজ গ্রেন্ডিং মেশিন পড়ে গিয়েছিল। এতে মাথা ফেটে তার মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া তিন হাজার ডলারের সম্পত্তি হাতে আসে বেল গানেসের। স্থানীয় অনেকে অবশ্য, পিটারের মৃত্যুর এই কারণ মানতে রাজী ছিল না। তাদের দাবি পিটারকে হত্যা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বেল গানেস অবশ্য তদন্ত কমিটিকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিলেন। কমিটি পিটারকে হত্যার তত্ব নাকচ করে দেয়। ১৯০৩ সালে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন বেল। ১৯০৩ থেকে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত একাই খামার পরিচালনা করেন গানেস। ১৯০৭ সালে রে ল্যাম্পহিরি নামে এক ব্যক্তিকে সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। একই বছর গানেস শিকাগোর সবকটি পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেন । এতে লেখা ছিল- ‘ব্যক্তিগত- ইন্ডিয়ানার সবচেয়ে সুন্দর জেলা লা পরটিতে এক সদ্য বিধবার বিশাল খামার রয়েছে। যৌথ সম্পদ সৃষ্টির জন্য এমন ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচিত হতে চাইছেন, যার সম পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। ব্যক্তিগত দর্শনের আগ পর্যন্ত কোনো চিঠি গ্রহণীয় নয়। অলসদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই।’ গানেসের এই বিজ্ঞাপনে বেশ কয়েকজন মধ্যবয়সী পুরুষ সাড়া দিয়েছিলেন। এদের একজন হচ্ছেন জন মো। তাকে নিজের চাচাতো ভাই বলে প্রতিবেশীদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন গানেস। তার বন্ধকী ঋণ পরিশোধের জন্য এক হাজার ডলার দিয়েছিলেন মো। এক সপ্তাহ পরেই খামার থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। এরপরে গানেসের খামারে আসেন নরওয়েজীয় বংশোদ্ভূত জর্জ অ্যান্ডারসন। রাতের খাবারের পর জর্জের কাছে নিজের ঋণের বিষয়টি তুলে ধরেন গানেস। তাকে বিয়ে করলে এ ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হবে বলে জানান জর্জ। রাতে বাড়ির অতিথিশালাতেই ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। গভীর রাতে হঠাৎ করেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় তিনি তার শিয়রে মোমবাতি হাতে গানেসকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। গানেসের চেহারায় কাউকে হত্যা করার ঠিক আগ মুহূর্তের ছবিটি দেখতে পান জর্জ। আতঙ্কিত জর্জ চিৎকার শুরু করলে দ্রুত ঘর ছেড়ে চলে যান গানেস। আর জর্জ তখন পড়িমরি করে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে ঘরের বাইরে চলে যান। নিজের বোঁচকাবুঁচকি রেখেই তিনি মিসৌরির দিকে ছুট লাগান। দ্বিতীয়বার তিনি পেছনেও ফিরে তাকাননি। গানেসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ এই জর্জ । ১৯০৮ সাল নাগাদ গানেসের খামারে বেশ কয়েকজন পুরুষই এসেছিল তার পাণিপ্রার্থণা করতে। একে একে এরা সবাই গুম হয়ে গেছে। তাদের কোনো খোঁজই পায়নি স্বজনরা। তার সর্বশেষ শিকার ছিল সাউথ ডেকোটার কৃষক অ্যান্ড্রিউ হেলজিলিয়েন। প্রায় এক বছর অ্যান্ড্রিউর সঙ্গে পত্র বিনিময় করেছিল গানেস। সর্বশেষ চিঠিতে গানেস তাকে লা পরটিতে এসে বিয়ের আমন্ত্রণ জানায়। ১৯০৮ সালের জানুয়ারিতে জমানো ২ হাজার ৯০০ ডলারের চেক নিয়ে লা পরটিতে চলে আসে অ্যান্ড্রিউ। লা পরটির সেভিংস ব্যাংকে গানেস ও অ্যান্ড্রিউ একসঙ্গে এসে সেই চেকটি ভাঙ্গিয়ে নেয়। এর কয়েকদিন পর অ্যান্ড্রিউর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। বাড়িতে পাওয়া চিঠির সূত্র ধরে অ্যান্ড্রিউর খোঁজ জানতে চেয়ে গানেসের কাছে চিঠি লেখেন তার ভাই অ্যাসলি। জবাবে গানেস জানান, সে তার ভাইয়ের কোনো খোঁজ জানে না । সে কখনো তার খামারে আসেনি। সম্ভবত সে নরওয়ে চলে গেছে। গানেসের এ জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি অ্যাসলি। পরের চিঠিতে সে জানায় , ভাইয়ের খোঁজে সে লা পরটিতে আসছে এবং সে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযান চালাবে। এ চিঠি পেয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গানেস। এর আগে একটা কথা না বললেই নয়। গানেসের খামারের কর্মচারী রে ল্যাম্পহিরি প্রথম থেকেই তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। গানেসকে সে প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিল। জবাবে গানেস তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায় যে , তার সাবেক কর্মচারী তাকে বিরক্ত করছে। লা পরটিতে এক আইনজীবীর কাছে গানেস জানান, রে ল্যাম্পহিরি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। তিনি তার সব সম্পত্তি সন্তানদের নামে উইল করে দেন। ২৮ এপ্রিল সকালে গানেসের খামারের নতুন কর্মচারী জো ম্যাক্সসনের নাকে পোড়া গন্ধ আসতে শুরু করে। দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি দেখতে পান, খামারে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত তিনি সাহায্যের জন্য শহরের দিকে ছুট দেন। তবে মান্ধাতা আমলের দমকল বাহিনী আসতে আসতে পুরো খামার পুড়ে ছাই। খামার থেকে গানেসের তিন সন্তানের মৃতদেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, এটি গানেসেরই মৃতদেহ। গানেসের আগের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খামারে অগ্নিসংযোগের সন্দেহে ল্যাম্পহিরিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্চে ভাইয়ের খোঁজে লা পরটিতে হাজির হয় অ্যাসলি। সে পুলিশকে জানায়, তার ভাই হয়তো গানেসের লালসার শিকার হয়েছে। প্রথমে পুলিশ তার এ অভিযোগ পাত্তা না দেয়নি। পরে গানেসের খামারের কর্মচারী ম্যাক্সসন জানান, তার মালিক তাকে শুকর চড়ানোর একটি জায়গা আবর্জনা দিয়ে ভরাটের নির্দেশ দিয়েছিল। সেখানে বেশ বড়সড় একটি গর্তও ছিল। পরে পুলিশ সেই গর্ত খুঁড়তে শুরু করলে বেরিয়ে আসতে শুরু করে গানেসের খামারে আসা নিখোঁজদের একের পর এক দেহাবশেষ। খোঁজ মেলে অ্যাসলি ভাইয়েরও মৃতদেহের। সেই সঙ্গে অজ্ঞাত দুই শিশুর লাশও উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে। গানেসের খামার থেকে উদ্ধার হওয়া দগ্ধ নারীদেহের ময়না তদন্ত শেষে দেখা যায় এটি তার মৃতদেহ নয়। কারণ ওই নারীর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। আর ওজন ছিল ১৫০ পাউন্ড। অথচ গানেসের উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চিরও বেশি । আর তার ওজন ১৮০ থেকে ২০০ পাউন্ড। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই নারীর পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি। খামারে অগ্নিসংযোগ ও হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার রে ল্যাম্পহিরি পরবর্তীতে আদালতকে জানায়, সে আর গানেস একসঙ্গে খামারে অগ্নিসংযোগ করেছে। তার আগে ব্যাংকে জমানো সব টাকা তুলে নিয়েছিল গানেস। তিন বছরে সে প্রায় ৪২ জনকে হত্যা করেছে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সে এক হাজার থেকে ৩২ হাজার ডলার পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। সে হিসেব তার মোট নগদ সম্পত্তির পরিমাণ ছিল আড়াই লাখ ডলার (বর্তমান বাজার দরে ৬৩ লাখ ডলার)। ল্যাম্পহিরি জানায়, অগ্নিসংযোগ শেষ করে তার জন্য গানেসের এক জায়গায় অপেক্ষা করার কথা ছিল। তবে তার সঙ্গে বেইমানি করেছে গানেস। তাকে ফেলেই সে পালিয়ে গেছে। পরবর্তী কয়েক বছরে গানেসের পরিচিতজনদের অনেকেই তাকে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, সান ফ্রান্সিসকো ও লস অ্যাঞ্জেলসে দেখেছে। তবে ধারণা করা হয়, ১৯৩১ সাল বেঁচে ছিল গানেস। শেষ জীবনে মিসিসিপিতেই ছিল সে। সেখানে বিশাল খামারের মালিক বনে রীতিমতো জমিদারের হালেই জীবন পার করেছে সে। একুশে সংবাদ ডটকম//এম আরিফ//০৬-০১-২০১৬
Link copied!