AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মূকাভিনয়ে বুদ্ধি বাড়ে


Ekushey Sangbad

১১:৩৫ এএম, আগস্ট ১২, ২০১৫
মূকাভিনয়ে বুদ্ধি বাড়ে

একুশে সংবাদ: লেখাপড়াকে আনন্দদায়ক করার জন্য ব্র্যাকের ১৭ হাজার ৮২৬টি মূকাভিনয় স্কুলে শেখানো হচ্ছে । শিক্ষার্থী ছয় লাখ ৮১ হাজার ৫০৩ জন।সবুজের ক্লাস করা নিয়ে বরাবর আপত্তি রয়েছে । শিক্ষক মজা করে কোনো কিছু আলোচনা করতে চাইলেও তা নিয়ে তার মন বসত না। পাঠ্য বইয়ের বাইরে খুঁজত আনন্দ। স্কুলে আসার জন্য মা-বাবা চাপ দেন, তাই নিজের অনিচ্ছায়ই স্কুলে আসে ঢাকার ধামরাই উপজেলার কান্দাপাড়া ব্র্যাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ।   ফাল্গুনের এক দুপুরে তার মন উসখুস। বাসায় ঘুড়ি আর লাটাই প্রস্তুত আছে। ক্লাস শেষ করে দৌড়ে যাবে বাড়িতে। তারপর ঘুড়ি নিয়ে চলে যাবে মাঠে। ক্লাসে বসে বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিল। ক্লাস টিচার ফাহিম খেয়াল করতেন, তাঁর এ ছাত্রের মনোযোগ সব সময় একটু কম। যখন তখন উদাস হয়ে যায়। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। চেষ্টা করেও পড়ায় মনোযোগ বাড়াতে পারেননি। সেদিন ক্লাসে এসেই ঘোষণা দিলেন, 'এখন ঘুড়ি ওড়ানোর সময়।   তোমরা ঘুড়ি ওড়াও কে কে?' ঘুড়ির কথা শুনে ক্লাসে মনোযোগ আসে সবুজের। হাত তোলে সে। তারপর স্যার কী বলেন, সেদিকে নজর দেয়। 'আজ আমি তোমাদের নতুন কিছু শেখাব। কিভাবে কথা না বলে আমাকে অদৃশ্য রেখে আকাশে ঘুড়ি ওড়াতে হয়, তা তোমাদের দেখাব।'   ক্লাসে তখন নীরবতা। স্যার কিভাবে দেখাবেন, তা জানার জন্য সবার কৌতূহল। সবুজের চোখ একটু বড় বড়। মনে মনে বলে, কী বলে স্যার এসব? কথা শেষ করে স্যার ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে এসে দাঁড়ান। ঘুড়ি, ঘুড়ি হাতে ধরা, ওড়ানোর সব কিছু দেখান অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। স্যারের হাত নড়ে, পা নড়ে। মাঝেমধ্যে পা সামনের দিকে যায়। মাঝে হাত বাড়িয়ে দেন। এভাবে ছাত্রদের দেখান, একটি আমগাছ থেকে ফল কিভাবে ছিঁড়ে।   দেখানো শেষ হলে ক্লাস আবার সরব হয়ে ওঠে। স্যার সবুজকে ডেকে বলেন, 'আমি কী কী করেছি, তা তুমি করে দেখাতে পারবে?' পারব স্যার-বলে সে এগিয়ে আসে। 'স্যারের কর্মকাণ্ড মুখস্থ করে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। কিছুটা মেলে, কিছুটা মেলে না।   সারা দেশে ব্র্যাক স্কুলগুলোয় মূকাভিনয় শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সে লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও সম্পন্ন হয়েছে। মূকাভিনয়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ব্র্যাকের মূকাভিনয় কর্মসূচির প্রধান রিসোর্স পারসন, মাইম আর্টের প্রতিষ্ঠাতা নিথর মাহবুব বলেন, 'মূকাভিনয়ে কথা না বলে বস্তুকে অদৃশ্য রেখে মনের ভাব প্রকাশ করতে হয়। অঙ্গভঙ্গির সাহায্যে নিজেদের কথা অন্যদের জানাতে হয়। এতে মস্তিষ্কের ব্যবহার বাড়ে। কল্পনাশক্তি বেড়ে যায়। জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়।'   মূকাভিনয়ে থাকা প্রসঙ্গ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'মূকাভিনয়ে আমরা ফুল ছেঁড়া, প্রজাপতি ধরা, ঘুড়ি ওড়ানো, পানি খাওয়া, চা বানানো, মালা গাঁথা, গুলতি দিয়ে শিকার করাসহ বিভিন্ন কিছু শিখিয়ে থাকি। শ্রেণি অনুসারে তাদের পাঠক্রম ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রতিটি বিষয় তুলে ধরার জন্য কৌশল রপ্ত করানো হয়।'   উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'পেঁয়াজ কাটতে গেলে ঝাঁঝ বের হয়। একজন ব্যক্তি পেঁয়াজ কাটছেন বোঝাতে গেলে তাকে পেঁ য়াজ, ছুরি, পেঁয়াজ কাটা, চোখে হাত দেওয়ার কাজগুলোও নিপুণভাবে দেখাতে হয়। এতে মূকাভিনয় পূর্ণতা পায়।'   ব্র্যাকের শিক্ষা প্রোগ্রামে মূকাভিনয় রাখা প্রসঙ্গে ব্র্যাক শিক্ষা প্রোগ্রামের সহপাঠক্রমিক শিক্ষা কার্যক্রমের পরামর্শক কামরুন্নেসা হাসান জানান, '১৯৮৫ সালে সারা দেশে ব্র্যাক স্কুল চালু করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্য বই পড়ানোর পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম রাখা হয়েছে।   ২০১৩ সালে সহপাঠক্রমে মূকাভিনয় যোগ করা হয়। গান, নাচ, আবৃত্তি, গল্প বলা, ছবি আঁকা, মূকাভিনয় প্রতি সপ্তাহে একদিন করে শেখানো হয়। প্রতিদিন ২০ মিনিট সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের জন্য শিক্ষকরা সময় দিয়ে থাকেন। দেশের ১৭ হাজার ৮২৬টি ব্র্যাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয় লাখ ৮১ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থী মূকাভিনয় শিখতে পারছে। '   ব্র্যাকের মূকাভিনয় শিক্ষার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ব্র্যাকের প্রোগ্রাম হেড এডুকেশন প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ জানান, 'মূকাভিনয়ের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের মেধার চর্চা হয়। তাদের কল্পনাক্ষমতা বাড়ে। আমরা এখন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূকাভিনয় শেখাচ্ছি। প্রতিবছর আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'তারায় তারায় দীপশিখা' নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। গান, নাচ, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থাকে এতে।     সেখানে উপজেলা, জেলা, বিভাগ, জাতীয়-এসব ধাপে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হয়। সে প্রতিযোগিতায় আমরা সামনের বছর মূকাভিনয় যোগ করব। সামনে আমরা আমাদের কিশোরী ক্লাব, গণকেন্দ্রে মূকাভিনয় শেখানোর ব্যবস্থা করব। পাঁচ বছর পর মূকাভিনয় জাতীয় পর্যায়ে সাড়া জাগাবে।'   শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করার একটি পদ্ধতি মূকাভিনয়। ব্র্যাকের এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীকে ক্লাসমুখী করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।     একুশে সংবাদ ডট কম/আলম গীর হােসনে/১২.০৮.২০১৫
Link copied!