আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হবে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আর এ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপিসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করায় সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আস্থা ফেরাতে চায় ইসি। ভোটার উপস্থিতি ও সুষ্ঠু নির্বচানের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করতে মাস্টার প্লান করা হচ্ছে।
বর্তমান কমিশন বলছে, পাঁচ সিটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটে আনতে সাহায্য করবে।
ইসি সূত্র জানায়, আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কারণে নির্বাচনে সহযোগিতা করতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে চিঠি দিচ্ছে ইসি। এরই ধারাবাহিকতায় সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে বিশেষ বিধানের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর বিধান অনুসরণ এবং ইসিকে সহযোগিতা দিতেই চিঠি দিয়েছে ইসি।
চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি অনুসারে আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এসব নির্বাচন পরিচালনার জন্য রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ তথা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্য থেকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা প্রয়োজন হবে।
এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে থেকে কারও কারও নির্বাচনে অন্যান্য দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন হতে পারে। সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ ছাড়াও নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/সংস্থার স্থাপনা/অঙ্গন ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য এবং স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-এর বিধি ৩ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবে এবং অনুরূপভাবে নির্দেশিত হলে ওই ব্যক্তি বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ উলিখিত দায়িত্ব পালন বা এরূপ সহায়তা দিতে বাধ্য থাকবে। ওই বিধিমালার বিধি ৮৯ অনুযায়ী নির্বাচনের সময়সূচি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার ১৫ দিন সময় অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ ব্যতীত বিধি উলিখিত কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করা যাবে না।
এদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সহায়তা দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতার পাশাপাশি নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা আবশ্যিকভাবে পালনের সহায়তা করতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। কেননা আইন অনুযায়ী ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্নের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন হবে।
নির্বচান কমিশনেের উপসচি মো.আতিয়ার রহমান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে নির্দেশনাটি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন ও বিধি অনুসারে ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। তাই চার সিটি নির্বাচনে ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা মনোনয়নপত্র দাখিল করলে যাতে তাদের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা যায়, সে জন্য সব ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন,আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আমরা সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শেষ করে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই।
তিনি বলেন, পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন বিএনপি অংশ নেয়নি এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ভালো কাজই করে যাচ্ছি এবং আগামীতেও আরো ভালো করব। আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমাদের পরীক্ষা নিন। আপনারা তো আমাদের পরীক্ষাই নিচ্ছেন না। আমরা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত সবসময়।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পাঁচ সিটির করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এর প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠ হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা ইসির জন্য সহজ হবে। তাই সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসির জন্য অগ্নি পরীক্ষা। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসিকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
উল্লেখ্য,আগামী ২৫ মে গাজীপুর, আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহাঙ্গীর