আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কঠোর বাজার মনিটরিং করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে প্রশাসন। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি ও অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, র্যাব, নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করবে। রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা এবং দ্রব্যমূল্য কমাতে পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের কেনাকাটা করছেন ভোক্তারা। খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি বেড়ছে। ছোলা ও পেঁয়াজ সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ইতোমধ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। দেশে বিপুল পরিমাণ চিনির মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি মিলে চিনির কোন সঙ্কট নেই। মশুর ডালের মজুদ সন্তোষজনক। এ অবস্থায় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় । রোজা সামনে রেখে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে তবে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এখনও দ্রব্যমূল্য বাড়াতে তৎপর রয়েছে। আর এ কারণেই কঠোর বাজার মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত এক বৈঠকে পণ্যের অবৈধ মজুদ এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থা নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের তদন্তে চিনি, মুরগি,গরুর মাংসসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মিলেছে। এসব কারণে আরও কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া সরকারী সংস্থা টিসিবি প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২০ এবং প্রতিকেজি ছোলা ৫৫ টাকায় বিক্রি করছে। তবে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ছোলা ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি চিনি খুচরা বাজারে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভারত তাদের অতিরিক্ত চিনি বাংলাদেশে রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন রমজানে কিছুটা কম মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি করবে। টিসিবি থেকেও ভোক্তারা ভর্তুকি মূল্যের চিনি কিনতে পারছেন। তবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে এখনও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। এ ক্ষেত্রে ভোজ্যতেলের বাজারেও কঠোরভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এবিষয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বেশি রাখা এবং কারসাজির বিষয়টি এখন প্রমাণিত। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবে সন্তুষ্ট নয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। সরকারীভাবে আরও গভীরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অধিদফতর থেকে এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ভোক্তা অধিকার কমিটির কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম থাকবে। একজন উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, অর্থ, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং আনসার, পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত টিম মাঠে থাকবে।
এবিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তারা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিম ছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, র্যাব এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম রমজানের আগে ও র মজান মাসে বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করবে। পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে উৎপাদনসহ পাইকারি ও খুচরা মূল্য মনিটরিং করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, সরকারের বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করা উচিত। মাঠ পর্যায়ে তদারকি জোরদার করাসহ জেলা প্রশাসককে নিয়ে এখন বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে তদারকি জোরদার করতে সকল জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকেও একই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারও সুবিধা নেওয়া উচিত নয়। এ সময় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কঠোর মনিটরিং করা হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে টিসিবির ওএমএস কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পুরো রমজান মাস বাজার মনিটরিং করা হবে। পণ্যের দাম বেশি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। জানা গেছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী রবিবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে।
একুশে সংবাদ/এসএপি