AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পরিণতিও জোটেনি কপালে, তবুও ভালোবেসে অমর যারা


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪:৪৮ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

পরিণতিও জোটেনি কপালে, তবুও  ভালোবেসে অমর যারা

সময়ের ঘেরাটোপ পেরিয়ে বর্তমানের বহু দূরে তাদের অবস্থান, একে অন্যের সঙ্গে পূর্ণতার পরিণতিও জোটেনি কপালে। তবু অমর হয়ে রয়ে গেছেন, নিজেদের বেদনাবিধুর প্রেমের গল্পগুলোর জন্যই। ভালোবাসার কথা এলে মানুষের মুখে মুখে ফেরে যাদের নাম, তাদের কথাই বলব আজ। সময়ের ঘেরাটোপ পেরিয়ে বর্তমানের বহু দূরে তাদের অবস্থান, একে অন্যের সঙ্গে পূর্ণতার পরিণতিও জোটেনি কপালে। তবু অমর হয়ে রয়ে গেছেন, নিজেদের বেদনাবিধুর প্রেমের গল্পগুলোর জন্যই।

ভালোবাসা দিবসে আবারও ঘুরে আসা যাক সেইসব গল্পের গলি থেকে।

 

লাইলি-মজনু
‍‍`লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া, মজনু গো আঁখি খোলো‍‍`। এই আকুল আর্তিতে ভরা নজরুল সঙ্গীতটিতে যে দু‍‍`জনের নাম আছে, তার মধ্যে একজন লাইলি; নিজের নামের অর্থের মতোই যিনি ছিলেন রাত্রির সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। আর মজনু নামটা ঠিক প্রাথমিক কোনো নাম ছিল না। এক সম্ভ্রান্ত বেদুইনসন্তান কায়েসকে পরবর্তী সময়ে তার দিওয়ানাপনার জন্য সকলে নাম দেয় ‍‍`মাজনুন‍‍`। সেই থেকে ‍‍`মজনু‍‍`। এ শব্দের অর্থ ‍‍`প্রেমে মত্ত‍‍`। মত্তই ছিলেন তিনি। দিন-দুনিয়া সবকিছু ভুলে লাইলির কল্পনায় বিলীন। ব্যবহারিক জগতের হিসেব-নিকেশ তাকে খুব একটা ভাবাতো না। তাকে ভাবাতো লাইলির ওই দুটো চোখ আর সেই চোখের জন্য জন্ম নেওয়া কাব্যসৌরভ। কবিও ছিলেন বটে মজনু। সপ্তম শতাব্দীর আরব কাব্যজগতে তার অবদান আছে অনেক। লাইলির পিতার কাছ থেকে বারবার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর, এমনকি অন্য জায়গায় লাইলির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও বনে-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে তিনি গড়ে তুলেছিলেন তার প্রেমের কাব্যভাণ্ডার। এ চর্চা জারি থেকেছে পরবর্তী সময়েও।

 

ভালো তো বাসতেন লাইলিও, কিন্তু সমাজ আর পরিবারের চাপে নিজেকে আর নিজের সব ইচ্ছেকে গলা টিপে হত্যা করা ছাড়া উপায় ছিল না। স্বামীকে কখনো মন থেকে মেনে নিতে না পারেননি, মজনুকে ভেবে ভেবে দিনাতিপাত হতো তার। স্বামী মারা যাবার পর ক্ষীণ আশায় লাইলি ভেবেছিলেন, প্রেমিকের সঙ্গে মিলিত হবেন। কিন্তু বেদুইনদের নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল আবারও ঘিরে ধরলো তাকে। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্তত দু বছর গৃহবাসে শোকপালন করতে হয় প্রতিটি স্ত্রীর। অগত্যা! সে ২ বছরে অন্য এক শোকেই বরং লাইলি প্রাণ হারালেন। প্রিয়তমার মৃত্যুসংবাদ শুনে এতদিনের অপেক্ষা আর ধৈর্যের সব বাঁধ ভেঙে যায় কায়েস ওরফে মজনুরও। লাইলির কবরের ওপর শুয়ে শুয়ে অশ্রুপাত ছাড়া তার আর কিছু করার ছিল না। একদিন সেখানেই সমাপ্তি ঘটে তার জীবনেরও। তবে রয়ে যায় তাদের অমর প্রেমকাহিনী, আজও যা থেকে তৈরি হয় সিনেমা, আজও লোকে প্রেমের উদাহরণ টানে, তখন লাইলি-মজনুর নাম আওড়ায়। সেই লাইলি-মজনু, জীবদ্দশায় মিলন বোধহয় কোনোকালেই লেখা ছিল না তাদের ভাগ্যে, হয়তো ওপারে এক হয়েছেন।

 

চণ্ডীদাস-রজকিনী
‍‍`চণ্ডীদাস আর রজকিনী- তারাই প্রেমের শিরোমণি, বারো বছর বড়শি বাইল তবু আধার গিললো না‍‍`। উপকথা আর সত্যের সীমারেখা ডিঙিয়ে শোনা যায় এক বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস আর ধোপাকন্যা রামীর কথা। ‍‍`রজকিনী‍‍` শব্দের অর্থও দাঁড়ায় ‍‍`ধোপাকন্যা‍‍`। ব্রাহ্মণ পরিবারের নানান ছুঁৎমার্গ থাকে, সে আর নতুন কী! ধোপার মেয়ে ছুঁলেও সে সময়ে তাদের জাত যাওয়া অবাক কিছু ছিল না। অথচ ব্রাহ্মণসন্তান চণ্ডীদাস কি না প্রেমে পড়লেন জাতপাতের চিন্তা না করেই। অবশ্য প্রেম কি কোনোকালে এসব পরোয়া করে? যে ঘাটে রজকিনী কাপড় ধুতে আসতেন, চণ্ডীদাস প্রতিদিন নিয়ম করে সেখানে মাছ ধরতে যেতেন।

 

এক যুগ ধরে শুধু এই অপেক্ষাই। কথা নেই, বার্তা নেই। নিজে থেকে চণ্ডীদাস কখনো আলাপ জুড়ে দেননি, তবে রজকিনীও হয়তো বুঝতেন— তার জন্যই প্রতিদিন এসে ধরনা দিচ্ছেন এই কাব্যমনা মানুষটি। দীর্ঘ ১২টি বছর পর একদিন সেই রজকিনী শুধোলেন, ‍‍`বড়শিতে কী মাছ ধরলা?‍‍` চণ্ডীদাস মুখ তুলে উত্তর দিলেন, ‍‍`১২ বছর পর এইমাত্র ঠোকর দিল।‍‍`

 

অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়, কথাটা ফলে গেলো আবারও। সেই থেকে শুরু তাদের পরিচয় কিংবা প্রেমালাপের। খুব স্বাভাবিকভাবেই তৎকালীন সমাজব্যবস্থা তাদের এই ‍‍`অসম‍‍` প্রেমকে মেনে নেয়নি। বহু অপমান-অপবাদের শিকার হতে হয়েছে, বিশেষ করে চণ্ডীদাসকে, কেন না তিনিই ছিলেন তথাকথিত উঁচু শ্রেণির বাসিন্দা। তার পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও অস্বীকৃতি জানায় সেখানকার ব্রাহ্মণসমাজ। এসব কিছুর পরও অবশ্য নিজের সঙ্গীর কাছ থেকে দূরে সরেননি তিনি। বিপদে-আপদে এক সঙ্গেই থেকেছেন। শেষমেশ রামী, পরবর্তীতে ‍‍`রজকিনী‍‍` নামেই অধিক পরিচিত সেই নারীটিকে তার সাধনসঙ্গিনী হিসেবে মেনে নিতে একপ্রকার বাধ্য হয় সবাই।

 

শিরি-ফরহাদ
শিরি-ফরহাদের প্রেমকাহিনীতে একটি তৃতীয় কোণ এই যুবক অথবা শিরি-খসরুর ক্ষেত্রে ফরহাদই সেই তৃতীয় কোণ। শেষমেশ খসরুর ভাগ্যের জুটেছিল পার্শ্ববর্তী রাজ্য আর্মেনিয়ার রাজকন্যা শিরিন ওরফে শিরি। তবু অমর হওয়া গল্পটা কিন্তু তাদের নয়। শরৎচন্দ্র যেমনটা বলেছিলেন, ‍‍`বড় প্রেম শুধু কাছেই আনে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়‍‍`– এই গল্পটাও অনেকটা তেমন। গল্পটা একপ্রকার একপাক্ষিক প্রেমের। আর একতরফা প্রেমের অদ্ভুত এক শক্তি আছে– হয়তো মানব ইতিহাসের স্মরণকালে খোদাই হবার মতো যথেষ্ট সে শক্তি।

 

শিরি-খসরুর ভালোবাসার গল্পটা অনেক বেশি মারপ্যাঁচে পরিপূর্ণ, প্রতিশোধের আগুনে সেঁকা ঝলসে যাওয়া রুটির মতো। অন্যদিকে ফরহাদ ছিলেন এমন এক ভাস্কর, যে কিছু না বুঝেশুনেই শিরির প্রেমে পড়ে এবং নিজের মতো করে সেই প্রেমের চর্চা চালিয়ে যান। যদিও খসরুর এটা একেবারেই সহ্য হয়নি। ফরহাদকে শিরির দু চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। আর তাইতো ফরহাদকে বেহিস্তুন পর্বতে পাঠিয়ে দেন, খাঁজ কেটে সিঁড়ি তৈরি করার মতো অদ্ভুত কঠিন এক কাজ দিয়ে। যদিও প্রেমে সফল হবার আশায় অবুঝ প্রেমিক ফরহাদ সে কাজও মন দিয়ে করতে থাকেন। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি খসরু। একদিন শিরির মিথ্যা মৃত্যুসংবাদ পাঠান ফরহাদের কাছে, যাতে তার মধ্যে থাকা সব মনোবল ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। যা ভেবেছিলেন, তাই অবশ্য হয়েছিল। প্রেয়সীকে না পাবার বেদনা থেকেও তার কাছে তার না থাকার বেদনা বেশি ছিল। এতদিন ধরে আশায় বুক বেঁধে যে পাহাড়ের বুকে দিনাতিপাত করছিলেন, সেই পাহাড় থেকেই লাফিয়ে পড়লেন ফরহাদ।  


এই প্রতিটি গল্পই বহুবার বলা হয়েছে, বহুভাবে বলা হয়েছে। গল্পের যে স্বভাব, সে স্বভাব অনুযায়ী অনেকখানি বদলেও গেছে– তবু মূল সুরটি এক থেকেছে। গল্পের সুর, প্রেমের সুর।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি
 

Link copied!