দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। এই পদে তিনজন ব্যক্তিকে নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এগিয়ে রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে কে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, তা জানা যাবে।
নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রিসভার একজন প্রভাবশালী সদস্য বলে , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে চাইছেন। তিনি দু`জন খ্যাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা সম্মত হননি। তবে এখন যে আলোচনা চলছে, তাতে ড. মসিউর রহমান এগিয়ে রয়েছেন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শুরু থেকেই সম্ভাব্য হিসেবে আলোচনায় ছিলেন।
আলোচনায় এগিয়ে সংসদের স্পিকার ড . শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড . আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই তালিকা ছোট হয়ে এসেছে। বর্তমানে ড. মসিউর রহমানের মধ্যেই আলোচনা সীমিত হয়ে পড়েছে। তবে আওয়ামী লীগের বড় অংশটি নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দেখতে চাইছে। আরেকটি অংশ রাষ্ট্রপতি পদে আমলা প্রত্যাশা করছে।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেবে। অবশ্যই একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিই প্রাধান্য পাবেন। নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে ড. আব্দুর রাজ্জাকের প্রত্যাশা, সব রাজনৈতিক দল যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে- সে বিষয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও করা যেতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের কোনো নির্বাচনের ব্যাপারেই বিএনপির আগ্রহ নেই। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিএনপি বর্তমান অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। এটাই রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে তাঁদের প্রার্থী না থাকলে এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে জাতীয় পার্টি। রাষ্ট্রপতি পদে আমলা চাই না। কেননা, রাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হলে তিনি রাজনীতির ভাষা বুঝতে পারবেন।
এবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্নেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো সক্রিয় সদস্য কিংবা আওয়ামী লীগ মনোভাবাপন্ন কোনো বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রপতি হতে পারেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন রাষ্ট্রপতিকে ভুলে যেতে হবে, কোন দল তাঁকে নির্বাচিত করেছে। তাঁকে জনগণের প্রত্যাশার কথা ভাবতে হবে। তাহলেই জাতি আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে। আর এমন রাষ্ট্রপতিই জাতির প্রয়োজন।
সংবিধানের ৫০ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একাদিক্রমে হউক না হউক- দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।` ফলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আর সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে সংবিধান সংশোধন করে এক ব্যক্তির দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধান যুক্ত করা হলে, তাঁকে আবারও এই পদে প্রার্থী করার সুযোগ তৈরি হবে।
এবিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আবদুল হামিদকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
একুশে সংবাদ/আজ/এসএপি