তফসিল ঘোষনার সাথে সাথেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২-আসনের (গোমস্তাপুর-ভোলাহাট-নাচোল) আসন্ন উপ-নির্বাচনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এই আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে মাঠে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংয়োগ এবং পথসভাও শুরু করেছেন প্রায় ডজন খানেক সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনের দুটিতেই জয় পায় বিএনপি। চলতি মাসের ১১ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। আর এ নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের নেতারা জোরেশোরে মাঠে নেমে পড়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা যেমন আছেন; তেমনি মনোনয়ন প্রত্যাশী নতুন কিছু মুখও আছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসনে বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব হারুনুর রশিদ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২(নাচোল-ভোলাহাট-গোমস্তাপুর) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির অন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে হারুনুর রশিদ ও আমিনুল ইসলামও পদত্যাগের ঘোষনা দেন। আমিনুলের পদত্যাগপত্র গৃহীত হলেও; হারুন বিদেশে থাকায় তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি এবং আসনও শূন্য ঘোষনা করা হয়নি। তবে আগামীকাল বৃহস্প্রতিবার(২২ ডিসেম্বর) হারুনুর রশিদ স্বশরীরে পত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে দলীয় সুত্রে জানাগেছে।
জানাগেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২(নাচোলা-ভোলাহাট-গোমস্তাপুর) আসনে আমিনুল ইসলাম ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। পরাজিত প্রার্থী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫২ ভোট পান। এ আসনটি জামায়াত-বিএনপি প্রভাবিত এলাকা। গত ১১ ডিসেম্বর আমিনুল পদত্যাগ করার পর থেকে মাঠে নেমে পড়েছেন জিয়াউর রহমান। উপ-নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস মনোনয়ন পান এবং নির্বাচিত হন। ২০১৮সালের নির্বাচনে তিনি আবারো মনোনয়ন চাইলেও; দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি।তবে এবার উপ-নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এছাড়াও যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক, ঢাকা উত্তর ও উত্তর সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রফিকুল আলম সৈকত জোর্য়াদার দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। সৈকতের নিজের এলাকা নাচোল উপজেলা। এলাকার উন্নয়নে তিনি কাজ করেছেন। সৈকত জোয়ার্দ্দার বলেন,‘দলের জন্য তার পরিবারের বিপুল ত্যাগ রয়েছে। দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশাবাদী। এ কারনে তিনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন।’
এ আসনে নতুন মুখ হিসেবে ভোলাহাটের আব্দুস সামাদ মনোনয়ন চাইবেন বলে জানাগেছে। তিনিও মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগে কোনো পদ না থাকলেও; সামাদ সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরামের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি। তিনি এর আগে ভোলাহাট উপজেলার দু’বারের (জাতীয় পার্টি) চেয়ারম্যান ছিলেন।
এছাড়াও, এ আসনে নতুন মুখ হিসেবে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক কামরুল হাসান লিংকন। লিংকনের নিজ এলাকা গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর। তিনি ২০ বছর ধরে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। এলাকার উন্নয়ন এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন বরাবর। নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, পথসভাসহ উন্নয়মুলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনিও। করোনাকালীন এবং বিভিন্ন সময়ে গরীব ও অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী উপহার দিয়েছেন। করোনাকালীন প্রতিদিন ৫০০ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ এবং নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে কামরুল হাসান লিংকনের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। তিনি জানান,‘ বিগত দিনগুলোতে আমি দলের জন্য এবং আমার এলাকার জনগণের জন্য যে সকল কাজ করে আসছি; তাতে বিশ্বাস করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী।
মনোনয়ন পেতে দৌড় ঝাঁপ করছেন, গোমস্তাপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা বেগম। তিনি বলেন, রাজনীতির শুরু থেকেই নারীর উন্নয়নে কাজ করছি। আমার এলাকার নারীরা এখনও পিছিয়ে আছে। তাই নারীর উন্নয়নসহ এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। তাই আমি মনে করি আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এবং আমি আশাবাদী।’
মনোনয়ন প্রত্যাশী গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। তিনি গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সফল চেয়ারম্যান। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের তৃনমূল রাজনীতির সাথে জড়িত।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা, ভোলাহ্টা উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শওকত আরা।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩(সদর) আসনে হারুন ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলো। পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৯৩৮ ভোট। ওদুদের চেয়ে হারুন ৪৭ হাজার ৭২৩ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তবে পরাজিত হলেও; ওদুদ তৃণমুল নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন বলে দলীয় সুত্রে জানাগেছে। এ আসনের উপনির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। পুরনো প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলেও আশা করছেন। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপ জেলা শাখার সভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন।
ডা. রাব্বানী দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে কাজ করছেন। চিকিৎসাসেবা ছাড়াও করোনাকালে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় দূর্গত মানুষের মাঝে তিনি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। প্রায় বিনামূল্যে অেেনককে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগে তিনি পরিচিত মুখ। দলীয় নেতা-কর্মীরাও তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সহায়তা পেয়ে থাকেন।
জানাগেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনটি জামায়াত প্রভাবিত এলাকা। উপ-নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতও প্রার্থী দেবে না ধরে নিয়ে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রতাশীরা জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। সংসদীয় এলাকার গ্রামাঞ্চলে তারা গণসংযোগ শুরু করেছেন। কোনো কোনো প্রার্থী ডিজিটাল মাধ্যমে ভোট চেয়ে প্রচারও শুরু করেছেন।
একুশে সংবাদ/আ.ও.প্রতি/পলাশ