AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শ্রমের শ্রেষ্ঠত্বে রক্তিম ১লা মে ইতিহাস, তাৎপর্য ও করণীয়


Ekushey Sangbad
এম এন আলম
১১:৩৭ এএম, ১ মে, ২০২৫

শ্রমের শ্রেষ্ঠত্বে রক্তিম ১লা মে ইতিহাস, তাৎপর্য ও করণীয়

শ্রম, মানব সভ্যতার ভিত্তিপ্রস্তর । এই শ্রমই গড়ে তোলে সভ্যতা, নির্মাণ করে প্রগতির পথ। অথচ যুগ যুগ ধরে সেই পরিশ্রমী মানুষগুলোই হয়েছে বঞ্চিত, পদদলিত, আর শোষিত। এই নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেণির ন্যায্য অধিকার আদায়ের এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বহন করে সেই ১ মে, যা বিশ্বব্যাপী পালিত হয় “আন্তর্জাতিক শ্রমিক” দিবস হিসেবে।

ইতিহাসের পাতায় মে দিবস:  ১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে এসেছিলেন দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে। তাদের কণ্ঠে ছিল একটাই শ্লোগান “ আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম আর আট ঘণ্টা নিজের জন্য”। তবে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন রূপ নেয় রক্তাক্ত সংগ্রামে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অনেক শ্রমিক, আহত হন শত শত মানুষ। শিকাগোর হে মার্কেট স্কয়ারে সেদিন যা ঘটেছিল, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্থায়ী রেখাপাত করে। শ্রমিকদের সেই আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় , ১লা মে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হবে। এরপর থেকেই বিশ্বব্যাপী ১লা মে বিশ্ব মে দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে।

মে দিবসের তাৎপর্যঃ মে দিবস কেবল একটি দিবস নয়; এটি একটি প্রতীক - যে প্রতীক অধিকার প্রতিষ্ঠার, যে প্রতীক শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, এবং যে প্রতীক শ্রমের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার। এই দিনটি শ্রমিকের ঘাম, রক্ত ও আত্মত্যাগকে স্মরণ করার দিন , একইসঙ্গে এটি শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নের অঙ্গীকার।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবসঃ বাংলাদেশ একটি শ্রমনির্ভরশীল দেশ। গার্মেন্টস, নির্মাণ, কৃষি, চা শ্রমিক ,পরিবহনসহ নানা খাতে কোটি কোটি মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আজও বহু শ্রমিক কাজ করছেন অনিরাপদ পরিবেশে, অপ্রতুল মজুরিতে, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তার বাইরে থেকে। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রম আইনের প্রয়োগ নেই, নেই ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা , নেই শিশু শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রয়োগ। আজ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নাম বিশ্বময়, বাংলাদেশের পোশাক এখন একটি ব্রান্ড , বিশ্বের নামীদামি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক তৈরি করে স্ব স্ব দেশে / বিশ্বের আনাচে কানাচে চড়াদামে বিক্রয় করছেন। অন্যদিকে সেই শিল্পের প্রাণ—শ্রমিকেরা— কোন কোন কারখানায় বঞ্চিত ন্যায্য পারিশ্রমিক ও সম্মান থেকে। এমন অবস্থায় মে দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই বৈষম্য দূর করতে হবে, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের করণীয়ঃ ১ মে আমাদের কেবল উদযাপন করার দিন নয়, আত্মজিজ্ঞাসার দিনও। আজকের বাংলাদেশে আমাদের করণীয় হতে পারেঃ
১. শ্রম আইনের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা, যাতে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।
২. শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে সহায়তা করা ।
৩. গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা, যেন সমাজে শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের প্রতি সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়।
৪. শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করে শ্রমিক শ্রেণিকে আরও ক্ষমতায়িত করা।
৫. নারী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা, যাতে তারা বৈষম্য ও হয়রানি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
৬. যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কোনও শিশুকে নিয়োগ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা।
৭. নিয়োগকর্তা বিদ্যমান বীমা আইনের অধীনে গ্রুপ বীমা চালু করা।
৮. বেসরকারি খাতের যেকোনো প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের সুবিধার জন্য একটি ভবিষ্য তহবিল গঠন করতে পারে ।
৯. শ্রমিকদের দক্ষ ও পেশাদার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারিভাবে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
১০.স্ব-স্ব কর্মস্থল নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখা।

উপসংহারঃ মে দিবস শুধু ইতিহাস নয়, একটি আন্দোলনের শিখা। এটি শ্রমের গৌরবগাথা, সংগ্রামের উজ্জ্বল বাতিঘর। আমরা যদি চাই একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, তবে শ্রমিকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতেই হবে। ১ মে হোক আমাদের চেতনায় প্রতিদিন, হোক এক নতুন সমাজ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি—যেখানে শ্রম হবে গর্ব, আর শ্রমিক হবে সম্মানের।

লেখকঃ
এম এন আলম
ম্যানেজার, এইচ আর এ্যাডমিন এ্যান্ড কমপ্লায়েন্স
(শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা, ঢাকা ইপিজেড, ঢাকা)

 

একুশে সংবাদ//এ.জে

Link copied!