অনেকেই ধারণা দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক না-হলে শরীরের উপর কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। আর এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। তবে এটাও ঠিক যে, সব কিছুরই ভাল খারাপ দিক রয়েছে।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক মিলন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটি মনের পাশাপাশি দুটি শরীর মিললেই সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। তবে আজকালকার ব্যস্ত জীবনে বহু ক্ষেত্রেই শারীরিক মিলন হয়ে ওঠে না। ব্যস্ততার জেরে হয় সময় মেলে না, না-হলে কাজের চাপে দিনের শেষে ক্লান্তি গ্রাস করে আসে। ফলে যৌন ইচ্ছারও অভাব দেখা দেয়। আবার অনেক সময় লং-ডিসটেন্স রিলেশনশিপের কারণেও শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয় না। কিন্তু এর ফলে কি সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়তে পারে? আসলে এই প্রশ্নটাই জাগে সকলের মনে। অথচ এই প্রশ্নটা কিন্তু কেউ সেভাবে করেনই না যে, দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক না-হলে তার প্রভাব শরীরের উপর আদৌ পড়তে পারে কি না। অনেকেই ধারণা পুষে রাখেন যে, দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক না-হলে শরীরের উপর কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। আর এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। তবে এটাও ঠিক যে, সব কিছুরই ভাল খারাপ দিক রয়েছে। আর এটাও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। আলোচনা করে নেওয়া যাক, শারীরিক সম্পর্ক না হওয়ার প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে।
ইমিউনিটি সিস্টেম: শারীরিক মিলনের অভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ তন্ত্র দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যার ফলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা ধরনের সংক্রমণ এবং ফ্লু। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যাঁরা নিয়মিত শারীরিক মিলন করেন, তাঁদের লালায় ইনফেকশন-ফাইটিং অ্যান্টিবডি (ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ) বেশি থাকে।
মহিলাদের যৌন স্বাস্থ্য: নিয়মিত সঙ্গম না-হলে মহিলাদের যৌনাঙ্গের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। এতে রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এবং পরে শারীরিক সম্পর্কের সময় যৌন উত্তেজনা হ্রাস (মহিলাদের কামশক্তি হ্রাস) হতে পারে।
পুরুষদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য: বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত শারীরিক মিলন না-হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শারীরিক সঙ্গম আসলে অনেকটা ব্যায়াম বা এক্সারসাইজের মতো কাজ করে। যা শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
তীব্র মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্প: দীর্ঘদিন শারীরিক মিলন না-হলে ঋতুস্রাবের সময় নারীদের ক্র্যাম্প বা ব্যথার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আসলে সঙ্গমের সময় মহিলাদের দেহে এন্ডোরফিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং জরায়ুর সংকোচনও বৃদ্ধি পায়। আর এই দুটি বিষয়ই পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে দারুণ সহায়ক।
দীর্ঘদিন সঙ্গমের অভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বিশেষজ্ঞদের মতে, বহু দিন যৌন মিলন না-ঘটলে শরীরে এন্ডোরফিন ও অক্সিটোসিন হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে। এই দুটি হরমোন কিন্তু মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত সঙ্গম হলে মানসিক সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।
আর কী কী উপকার হয়?- দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক না করলে লিবিডো অর্থাৎ যৌন ইচ্ছা (কামনা) কমে যেতে পারে। নিয়মিত সঙ্গমের ফলে বাড়ে যৌন ইচ্ছাও। নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক না-হলে সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের উপরও তার প্রভাব পড়তে পারে। তবে অবশ্য সম্পর্ক শুধু সঙ্গমের উপর নয়, তা পারস্পরিক বোঝা-পড়ার উপরেও নির্ভর করে।
সব কিছুরই ভাল-মন্দ আছে। সেরকমই দীর্ঘ সময় ধরে যৌন সম্পর্ক না হওয়ারও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক, সেই উপকারিতাগুলো: নিয়মিত যৌন সম্পর্ক না-হলে অবাঞ্ছিত গর্ভসঞ্চার নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। শারীরিক মিলন না-হলে মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, নিজেকে এবং নিজের শরীরের চাহিদা বোঝার জন্যও সময় পাওয়া যায়।
একুশে সংবাদ/আ.ব.প্র
আপনার মতামত লিখুন :