ইসরায়েলের চলমান অবরোধ ও হামলার ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মারাত্মক খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় অপুষ্টিতে ভুগে অন্তত ৬৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া সেল।
তাদের ভাষ্যমতে, পর্যাপ্ত দুধ, পুষ্টিকর খাদ্য এবং জরুরি সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়াই এ বিপর্যয়ের মূল কারণ। শনিবার (২৮ জুন) দেওয়া এক বিবৃতিতে এই অবস্থাকে ‘পরিকল্পিত শিশু হত্যা’ এবং ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “গাজার শিশুদের খাদ্য ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রেখে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটি ঠান্ডা মাথায় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধ।” পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতাকে ‘চরম লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়।
গাজা কর্তৃপক্ষ এই সংকটের জন্য শুধু ইসরায়েল নয়, পশ্চিমা শক্তিগুলোকেও (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি) দায়ী করেছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে গাজার সকল সীমান্তপথ উন্মুক্ত করে জরুরি সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।
এর আগেই জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছিল, গাজায় শিশুর অপুষ্টি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সংস্থাটি জানায়, চলতি বছরের মে মাসেই অন্তত ৫ হাজার ১১৯ শিশুকে (বয়স ৬ মাস থেকে ৫ বছর) তীব্র অপুষ্টি সংক্রান্ত কারণে চিকিৎসা দেওয়া হয়— যা এপ্রিলের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ ও ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেশি।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক এদুয়ার বেইগবেদার বলেন, “মাত্র ৫ মাসে ১৬ হাজারের বেশি শিশুকে অপুষ্টির চিকিৎসা দিতে হয়েছে। অথচ প্রতিটি মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য ছিল। সব ধরনের সহায়তা সীমান্তে আটকে রয়েছে, যা মানবিক সংকটকে আরও গভীর করছে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “গাজার শিশুদের রক্ষা করতে হলে ইসরায়েলকে অবিলম্বে সীমান্ত খুলে দিতে হবে।”
এদিকে, শনিবার গাজার বিভিন্ন এলাকায় চালানো ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তুফাহ অঞ্চলে পরপর দুটি বিমান হামলায় একাধিক আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে যায়, নিহতদের মধ্যে ৯ জন শিশু রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ আল-নাখালা বলেন, “আমরা শান্তভাবে ঘরে বসে ছিলাম, হঠাৎ ফোন আসে— বলা হয় পুরো ব্লক খালি করতে। এরপরই বোমা হামলা শুরু হয়। এখন আমাদের বাড়িঘর, পরিবার— কিছুই নেই।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্ব সব দেখছে, অথচ কিছুই করছে না। এতো নিস্পৃহতা কীভাবে সম্ভব, বুঝে উঠতে পারছি না।”
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে