AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার শৈল্পিক কারিগর


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
১০:৩৯ এএম, ৬ অক্টোবর, ২০২০
বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার শৈল্পিক কারিগর

‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।’ বাসা তৈরিতে যে এমন সুনিপুণ কারিগর সে তো শিল্পের বড়াই করতেই পারে। কিন্তু কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতাটির নায়ক আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।

এক সময়ে বিভিন্ন গ্রামের আনাচে-কানাচে তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার সেই চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় গ্রামাঞ্চলে আগের মতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা আজ আর তেমন চোখে পড়ে না।

সাধারণত বাবুই পাখি খড়, ঝাউ, তালপাতা ও কাশবনের লতাপাতা দিয়েই উঁচু তাল গাছ এবং খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। বাবুই পাখি বাসা বানানোর জন্য খুবই পরিশ্রম করে থাকে। বাবুই প্রথমে ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায় এবং যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে অর্থাৎ পালিশ করে মসৃণ করে বাসা তৈরি করে। সাধারণত উঁচু তালগাছে খড়-কুটো দিয়ে তৈরি বাসা দেখতে খুব সুন্দর, আকর্ষণীয় ও মজবুত যা প্রবল ঝড়েও ছিঁড়ে পড়ে না।

বাবুই পাখির শক্ত বুননের সঙ্গে শিল্পের অনন্য সমন্বয় সৃষ্টি করে। যা একজন মানুষও সহজে টেনে ছিঁড়তে পারবে না। বাসা তৈরির শুরুতে বাবুই পাখির বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকলেও সম্পূর্ণ বাসা তৈরির পর বাবুই একদিকের গর্ত বন্ধ করে তাতে ডিম রাখার স্থান তৈরি করে। আর অপরদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ তৈরি করে।

বাসা তৈরির কাজের এক পর্যায়ে পুরুষ বাবুই পার্শ্ববর্তী বাবুইয়ের বাসায় গমন করে সঙ্গীর খোঁজে। সঙ্গী পছন্দ হলে পুরুষ বাবুই পাখি স্ত্রী বাবুই পাখিকে সঙ্গী বানানোর জন্য ভাব-ভালোবাসা নিবেদন করে। সেই সঙ্গে বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হতেই স্ত্রী বাবুইকে কাঙ্খিত বাসা দেখায়। কারণ বাসা পছন্দ হলেই কেবল স্ত্রী বাবুই সম্পর্ক গড়ে তোলে। স্ত্রী বাবুই পাখি বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে মাত্র চার থেকে পাঁচ দিন।

স্ত্রী পাখির প্রেরণায় পুরুষ বাবুই পাখি মনের আনন্দে বিরামহীনভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। একটি পুরুষ বাবুই পাখি একটি মৌসুমে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। তবে প্রেমিক বাবুই পাখি যতই ভাব ভালোবাসা প্রকাশ করুক না কেন প্রেমিকা বাবুই পাখি ডিম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেমিক বাবুই আবার সঙ্গী খোঁজার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

চিরচেনা সেই বাবুই পাখি এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। নির্বিচারে তাল ও সুপারি গাছ কাটায় বসবাস উপযোগী পরিবেশ নেই। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার শৈল্পিক কারিগর ‘বাবুই পাখি’! অথচ মাত্র ১৫-১৬ বছর আগেও গ্রামবাংলার সবখানে চোখে পড়তো চিরচেনা সেই পাখি। দেখা যেত সারিবদ্ধ তালগাছ অথবা সুপারি গাছের পাতায় কি সুন্দরভাবে ঝুলে আছে। এখন আর ঝুলতে দেখা যায় না, কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ।

নিপুণ শিল্পকর্মে গড়ে তোলা কুঁড়েঘর সদৃশ অপরূপ দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি। বিভিন্ন গাছের পাতা দিয়ে বাবুই পাখি বাসা তৈরি করে থাকে। এসব বাসা যেমন আকর্ষণীয়; তেমনি মজবুতও বটে। যে কারণে প্রচণ্ড ঝড়েও ছিঁড়ে পড়ে না বা পানি ঢুকতে পারে না। বাবুই পাখি অত্যন্ত পরিশ্রম করে তাল, নারিকেল, খেজুর গাছসহ আখ ক্ষেতে দলবেঁধে বাসা বাঁধে। নির্বিচারে বন ধ্বংস করে বৃক্ষ নিধন, অবাধে কীটনাশক ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেই আজ এসব পাখি বিলুপ্তির পথে।

জানা যায়, এ পাখির মাংস সুস্বাদু বলে শিকারিদের কারণেও এর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। সাধারণত তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যায়। দেশি, দাগি এবং বাংলা। তার মধ্যে দাগি এবং বাংলা বাবুই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে দেশি বাবুই এখনো কিছু কিছু চোখে পড়ে।

পরিবেশবিদরা মনে করেন, বাবুই পাখির শৈল্পিক নিদর্শন টিকিয়ে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া দরকার। এছাড়া এক শ্রেণির শিকারি নির্বিঘ্নে বাবুই পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একেবারে উদাসীন বনবিভাগ। ফলে বাবুই পাখিসহ অন্য অতিথি পাখি এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

এখন সময়ের দাবি প্রকৃতিপ্রেমী পাখি বাবুইকে টিকেয়ে রাখা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। ঐতিহ্যবাহী বাসা বানানোর এই কারিগরকে ফিরিয়ে আনতে সকলকে এক সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে।

একুশে সংবাদ/বা.জ/এআরএম

Link copied!