রাজধানীর বাজারে আট দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আদা-রসুনও। আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ৩৬ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা চিনি। ফার্মের মুরগির ডিম ডজনে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে সংকট দেখা দেওয়ায় নতুন করে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে আলুর দামও। আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। এ কারণে বাজারে এসব পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (৫ মে) রাজধানীর শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজ কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আলু কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩৭ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা ও রসুনের দাম আরো বেড়েছে। দেশি ও আমদানি রসুন কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। সরকার খোলা চিনির সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দিয়েছে ১০৪ টাকা কেজি।
সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত আছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিম ডজনে পাঁচ থেকে দশ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। সবজির দাম কিছুটা বাড়লেও চাল, ডাল, আটা, ময়দার দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে এসব পণ্য।
যাত্রাবাড়ী বাজার করতে আসা শেখ নাসির একুশে সংবাদকে বলেন, ঈদের আগে বাজার থেকে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছি মাত্র ৭০ টাকা দিয়ে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানেই দুই কেজি পেঁয়াজের দাম হয়ে গেল ১১০ টাকা। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যার কারণে ব্যবসায়ীরা নানা কারণ দেখিয়ে তাঁদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এতে করে দিন দিন আমাদের ওপর চাপ বাড়ছেই।
শ্যামপুর কাঁচাবাজারে কথা হয় মোসা. সাথীর সঙ্গে। পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বাজারে স্বস্তি নেই, দামের ভেলকিতে পকেট ফাঁকা বলেন, পণ্যের দাম বেড়ে পরিবারের খরচ যেভাবে বেড়েছে, আমাদের আয়-রোজগার সেভাবে বাড়েনি। এ অবস্থায় সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের দাম যাতে স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, সেটি নিশ্চিত করা। এমনিতেই মানুষ খুবই কষ্টে আছে, দামের এই লাগাম টানতে না পারলে মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে।’
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান একুশে সংবাদক.কম কে বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা জনস্বার্থে জরুরি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই মুহূর্তে বিলাসীপণ্য আমদানি বন্ধ রাখা যৌক্তিক। নিত্যপণ্য আমদানি বন্ধ রাখলে দেশের মানুষ বিপাকে পড়বে। তাই সরকারকে বিষয়টি অতি গুরুত্ব দিয়ে এখনই দেখতে হবে। আমদানির পাশাপাশি দেশে উৎপাদনেও আরো জোর দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার যে প্রবণতা চলছে, সেটার লাগামও টানতে হবে।
টিসিবির বাজারদর: ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বুধবারের বাজারদরের তালিকায় জানিয়েছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে আগের সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, এখন দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুন কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা দাম বেড়ে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহে দেশি আদা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু কেজিতে পাঁচ থেকে দশ টাকা বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজারের মেসার্স রিম জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. রহিম হোসেন একুশে সংবাদক.কম কে বলেন, পেঁয়াজের দাম মূলত ঈদের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। আলুর দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুন ঈদের আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।’দ
রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মো. মাজেদ একুশে সংবাদক.কম কে বলেন, ‘পেঁয়াজ, রসুন ও আদা আমদানি করা এখন জরুরি। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এসব পণ্য আমদানি করার জন্য এলসি দিচ্ছে না। আগামী সপ্তাহের মধ্যে যদি জরুরি ভিত্তিতে আমাদের এলসি করতে না দেওয়া হয়, তাহলে কোরবানির ঈদের আগেই উচ্চমূল্যে ভোক্তাদের পেঁয়াজ, রসুন ও আদা কিনতে হবে। কারণ আমদানি বন্ধ থাকার কারণে এখনই বাজারে এসব পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে আদার যে চাহিদা তার মাত্র ৫ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়, বাকিটা আমদানি করা হয়। রসুন চাহিদার ৫০ শতাংশ উৎপাদন হয়, বাকিটুকু আমদানি করে আনা হয়। পেঁয়াজ দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশই উৎপাদন হয়, ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়।’
কাপ্তান বাজারের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ আলী একুশে সংবাদক.কম কে বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি কেজি ২৩০ টাকা ও সোনালি মুরগির কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
হিলিতে আমদানি বন্ধ : প্রায় দুই মাস ধরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই অজুহাত দেখিয়ে দুই মাসে পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল সকালে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আড়তগুলোতে দেশি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সে পেঁয়াজ আবার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে কিছুটা কমতে শুরু করেছে দেশি পেঁয়াজের দাম।
সবজির বাজার : রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশ কিছু সবজির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে দশ টাকা বেড়েছে। বাজারগুলোতে বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, উচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা দেশি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর দেশি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ গাজর ৫০ টাকা, চালকুমড়া প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাপ্তান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. মানসুর একুশে সংবাদক.কম কে বলেন, মৌসুম না হওয়ায় গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে বেশ কিছু সবজির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে দশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :