AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রূপগঞ্জে শীতের আগমনী বার্তায় খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা



রূপগঞ্জে শীতের আগমনী বার্তায় খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। দিনের খরতাপ কমে এলেও সন্ধ্যার পর নেমে আসছে কুয়াশা, আর ভোরের আলো ফুটতেই প্রকৃতিতে ফুটে উঠছে শীতের স্নিগ্ধতা। ধানক্ষেতের মাথায় ঝরে পড়া শিশির, পুকুরপাড়ের ঠান্ডা বাতাস, জনপদের নির্জন পথে পাতার কাঁপুনি যেন জানান দিচ্ছে পিঠা-পুলির মৌসুম ঘনিয়ে এসেছে। আর এই শীতের আগমনী বার্তাকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন রূপগঞ্জের খেজুর রস সংগ্রহে নিয়োজিত গাছিরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জমির আইল, গ্রামীণ সড়ক, পুকুরপাড় কিংবা বাড়ির আঙিনায় যেখানে খেজুর গাছ আছে, সেখানেই চলছে ‘কাম দেওয়ার’ প্রস্তুতি। রশি বেঁধে উঁচু গাছে উঠছেন স্থানীয় গাছিরা। দক্ষ হাতে ছেঁচে পরিষ্কার করছেন শাখা-প্রশাখা। স্থানীয় ভাষায় এ ছেঁচা বা প্রস্তুতির কাজকে বলা হয় ‍‍`কাম দেওয়া‍‍`। প্রথম পর্যায়ের অংশ শুকালে আবার ছেঁচে নলি লাগানো হবে। তারপরই অপেক্ষা—শীতের প্রথম মিষ্টি রস ঝরার।

রস ঝরতে শুরু করলে শুধু রূপগঞ্জ নয়, আশপাশের এলাকা ও রাজধানী ঢাকা থেকেও রসপ্রেমীরা ভোররাত পর্যন্ত ছুটে আসেন। খেজুর রস খাওয়াকে ঘিরে তৈরি হয় ছোট্ট উৎসবমুখর পরিবেশ।

হাটাবো টেকপাড়া এলাকার রস ব্যবসায়ী মোশারফ মিয়া জানান,“এবার ৫০টি খেজুর গাছ কাম দিয়েছি—সবই নিজের। প্রতিটি গাছ থেকেই ৮–১০ লিটার রস পাওয়ার আশা করছি। রস বিক্রি করে ভালো লাভ হয়। প্রতিবছরই শীতের অপেক্ষায় থাকি। সব প্রস্তুতি শেষ, এখন শুধু রস ঝরার অপেক্ষা।”

একই এলাকার গাছি সোহাগ আক্ষেপ করে বলেন,“আগের মতো এখন আর খেজুর গাছ নেই, রসও কম পাওয়া যায়। তারপরও এ বছর ৩০টি গাছ ঠিকা নিয়েছি। আশা করছি এ বছর ভালো রস পাবো।”

মধুখালী গ্রামের গাছি জসিম উদ্দিন বলেন,“২০টি গাছ থেকে রস তুলব—এর মধ্যে ১০টি নিজের, ১০টি ঠিকা নেয়া। শীত এলেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি রস নামানোর কাজে। রসের অনেক চাহিদা থাকলেও আগের মতো গাছ নেই। পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।”

নরাবো এলাকার গাছি খায়রুল ইসলাম জানান,“নিজের ৩০টি গাছ আছে, আরও ১৫টি ঠিকা নিয়েছি। মৌসুম শেষে এগুলোর মালিককে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। গত বছর গুড় বিক্রি করেছি ৮০–১০০ টাকা কেজি, নালি ১০০–১২০ টাকা। দাম ঠিক থাকলে প্রতিদিন হাজার-বারোশো টাকা লাভ হয়।”

হাটাবো এলাকার ওমর ফারুক বলেন,“শীতের সময় রসকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়। রসের দোকানে মোটরসাইকেলের সারি, চায়ের দোকানে আড্ডা, ভোরের কুয়াশায় রস খাওয়ার ভিড়—সব মিলিয়ে যেন শীতবন্দনা উৎসব। এতে স্থানীয় ছেলেদেরও কর্মসংস্থান হয়।”

রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান,“উপজেলায় প্রায় ২ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। গাছের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও এ বছর উৎপাদনের সম্ভাবনা ভালো।”

তিনি আরও বলেন,“খেজুর গাছের বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। তাই বাড়ির আশপাশ, জমির আইল ও রাস্তার ধারে বেশি করে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিক খেজুর বাগান করলে কৃষকেরা আরও লাভবান হবেন।”

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রূপগঞ্জে খেজুর রসের ভিড় আরও জমে উঠবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। রূপগঞ্জের খেজুর রস এখন শুধু গ্রামীণ ঐতিহ্য নয়—এটি শীতের এক ব্যতিক্রমী উৎসব, যা মানুষকে টেনে আনে দূর-দূরান্ত থেকে।

কুয়াশাঘেরা ভোরে রস ঝরার শব্দ, পাটালি তৈরির মিষ্টি ঘ্রাণ, গুড় জ্বালানোর ধোঁয়া—সব মিলিয়ে রূপগঞ্জজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে শীতের জাদু। শীত মানেই খেজুর রস—এই ঐতিহ্য আজও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে গাছিদের পরিশ্রমে এবং রসপ্রেমীদের ভালোবাসায়।

 

একুশে সংবাদ//এ.জে

Link copied!