নড়াইল একটি প্রাচীন জনপদ। কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই জেলা আপন মহিমায় উজ্জ্বল। অবারিত মাঠ, শ্যামল প্রান্তর, ইছামতি, চাচুড়ীসহ অসংখ্য বিল ও নদীর প্রবাহমানতা—যেমন মধুমতি, চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলা—এই জেলাকে দিয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়।
লোকজ ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে: যাত্রাগান, পালাগান, নৌকা বাইচ, হাডুডু, লাঠিখেলা, হালুইগান, ষাঁড়ের লড়াই, মেলা, পিঠা উৎসব, কবিগান, জারিগান, গাজিরগান, বৃষ্টির গান ইত্যাদি।
১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মহকুমা থেকে জেলা হিসেবে মর্যাদা পায় নড়াইল। জেলা ঘিরে রয়েছে মাগুরা, খুলনা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও যশোর জেলা। আয়তন ৯৭৬ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার। বহু নদীর দেশ নড়াইল; মধুমতি, চিত্রা, নবগঙ্গা, নড়াগাতি প্রভৃতি নদীর প্রবাহ এই জেলার বৈশিষ্ট্য বহন করে।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, দশ লক্ষ বছর আগে গঙ্গা নদীর পলিমাটিতে যে ব-দ্বীপ গঠিত হয়, তারই একটি অংশ বর্তমান নড়াইল। ইতিহাস অনুযায়ী, গুপ্ত, পাল, সেন, মুসলিম ও ইংরেজ শাসনামল অতিক্রম করে নড়াইল আজকের অবস্থানে এসেছে।
জেলার জমিদারদের ইতিহাসও গৌরবোজ্জ্বল। বিভিন্ন স্থানে ছিল জমিদার বাড়ি ও তালুকদারদের আবাস। নীলচাষের সময় প্রায় ২০টি নীলকুঠি নির্মিত হয় এই অঞ্চলে।
জেলার শিক্ষার হার জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। এখানে একাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তির মধ্যে রয়েছে—রায়ত্তামের জোড়া বাংলা, নলদীর গাজীর দরগাহ, পাতালভেদী রাজার বাড়ি, রাজা কেশব রায়ের বাড়ি, লক্ষ্মীপাশার কালীবাড়ি প্রভৃতি।
নড়াইলের কিংবদন্তি দরবেশ ও সাধকদের মধ্যে আছেন ফকির ওসমান, সাধক লেংটা শাহ, বুড়ো দেওয়ান ও গঙ্গাধর পাগল।
বর্তমানে নড়াইল জেলা গঠিত চারটি থানায়: লোহাগড়া, কালিয়া, নড়াইল সদর ও নড়াগাতি। নানা সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের ১ জুলাই পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় নড়াইল।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে