বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি ও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থিত জন-প্রতিনিধিদের নিয়ে মাদকবিরোধী সমাবেশ করা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
সোমবার (৩০ জুন) দিনব্যাপী সদর উপজেলা জগনাথপুর ইউনিয়নের বড় খোচাবাড়ি এলাকার বলাকা উদ্যানে এ মাদকবিরোধী সমাবেশ করা হয়।
মাদকবিরোধী সমাবেশে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) দলীয় পদধারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের। তার মধ্যে রুহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু, রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের তথ্য-প্রযুক্তি গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মামলার আসামি ও ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায়, চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান ফয়জুল রহমান ও আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সচিন চন্দ্রসহ বেশ কয়েকজনকে দেখা যায়। এ সময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগের নেতারাও বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে ভুড়িভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মাদকবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত ফারজানা, বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ারে আলম খান, ভুল্লী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সরকারসহ ২২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, সচিব ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা।
অন্যদিকে, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের নিয়ে এমন প্রশাসনের এমন সমাবেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারী হিমেল লিখেন, ঠাকুরগাঁও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ মাদকবিরোধী সমাবেশে নিষিদ্ধ সংগঠন আ.লীগের বিভিন্ন নেতা ও একাধিক মামলার আসামিদের মিলন মেলা। অভিনন্দন সকলকে...। তার পোস্টে অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করে প্রতিবাদ জানান।
খোকা নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে এটি মাদকবিরোধী সমাবেশ নয়, এটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মিলন মেলা। এ সমাবেশটি করার আগে সদর ইউএনওকে ভাবা উচিত ছিল। তিনি কাদের নিয়ে এ সমাবেশ করতে যাচ্ছেন। এই সমাবেশে যারা অংশ নিয়েছে কয়েকজন ছাড়া সবাই জুলাই-আগস্টে পতিত আওয়ামী লীগের হয়ে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে কাজ করেছে, হত্যার নির্দেশ দিয়েছে। তারমধ্যে আবার কয়েকজন মামলার আসামি রয়েছে। এত কিছু জানার পরেও কিভাবে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নিয়ে একটি টেবিলে খাবার খেল ও সমাবেশ করল?
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক বা ইউএনও মামলার আসামিদের চিহ্নিত নাও করতে পারেন কিন্তু পুলিশ তো তাদের চিনেন, তারা কেন আসামিদের সঙ্গে নিয়ে সমাবেশ অংশ নিল? আবার একই সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতে করতে একই টেবিলে খাবার খেলেন।
নামপ্রকাশের অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে এক বছর পার না হতেই আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাদের নিয়ে এভাবে প্রকাশ্যে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে দেখা যাবে ভাবতেই কেমন লাগছে। এটা কি মাদকবিরোধী সমাবেশ ছিল না স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মেম্বার-চেয়ারম্যানদের নিয়ে মিলন মেলা? নাকি তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া? এগুলো দেখার জন্যই কি আমাদের ছেলেমেয়েরা রাজপথে রক্ত ঝড়িয়েছে?
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের তালিকায় নামের অনেক গরমিল দেখেছি। এরই মাঝে আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে প্রশাসনের এমন অনুষ্ঠানে আমরা হতাশাগ্রস্ত। এমনি আন্দোলনে গিয়ে পরিবারের কথা না শুনে ভুল করেছিলাম। আহত হয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়েছিলাম এবং আওয়ামী লীগের দোসরদের হুমকি ধামকিতে দিনরাত পার করেছি। আওয়ামী দোসরদের নিয়ে প্রশাসনের এমন আয়োজন আওয়ামী লীগকে আবারও মাঠে সক্রিয় ছাড়া কিছুই না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে মাদকবিরোধী সমাবেশের সভাপতি ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যাদের নাম বলা হচ্ছে তারা আসামি কিনা সেটা পুলিশ ও আদালত বলতে পারবে। আদালতের কোনো কাগজ এখন পর্যন্ত উপজেলায় আসেনি। মানুষজন তাদের ভিন্নভাবে দেখছে, সরকার এখনো তাদের বহালতবিয়তে যদি রাখে তাহলে ইউএনওর করার কিছু নাই।
একুশে সংবাদ/ঠা.প্র/এ.জে