চীনের বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা গ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী মো. তারিকুল ইসলাম (তাজ)। অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অসাধারণ অবদান ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
গত সোমবার (২৪ জুন) চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের হাইডিয়ান জেলার সুইইউয়ান লু-তে অবস্থিত বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ঝাও ওয়েই শেং প্রধান অতিথি হিসেবে তারিকুল ইসলামের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপপরিচালক প্রফেসর ঝাং ঝিহুই, আন্তর্জাতিক স্কুলের উপ-ডিন প্রফেসর উ সিয়াওজুন এবং তারিকুলের গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর সু ইউয়ানমিং প্রমুখ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তারিকুল ইসলাম সেরা গ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় তার তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর সু ইউয়ানমিং-ও ‘সেরা শিক্ষক অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। একসঙ্গে গুরু-শিষ্যের এই সাফল্য অনুষ্ঠানজুড়ে প্রশংসিত হয়।
এর আগে, তারিকুল ইসলাম চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশায় অবস্থিত চাংশা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। সেখানেও তিনি সেরা গ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
তার গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল—বিমান ডিজাইন, মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ড্রোন), বৈদ্যুতিক উল্লম্ব অবতরণযান (eVTOL), অ্যারোডাইনামিক্স এবং মেশিন লার্নিং। বর্তমানে তিনি বেইজিংয়ের একটি এ্যারোস্পেস কোম্পানিতে এয়ারক্রাফট অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সমাবর্তনে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারিকুল ইসলাম বলেন, “এই অর্জন আমি উৎসর্গ করছি আমার সুপারভাইজর প্রফেসর সু ইউয়ানমিং, আমার বাবা-মা, স্ত্রী এবং দেশি-বিদেশি প্রিয় সিনিয়র ভাই ও বন্ধুদের প্রতি।”
জানা গেছে, তারিকুল ইসলাম ১৯৯৮ সালের ১২ এপ্রিল নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সদরের বেলোবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. বুলেট হোসেন রাণীনগর আল-আমিন দাখিল সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মা মোছা. সুলতানা মোফতারুন বেগম একজন সরকারি স্কুল শিক্ষিকা। শিক্ষক দম্পতির বড় সন্তান তারিকুল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন।
তিনি বেলোবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়ে রাণীনগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ২০১৫ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং পরে ২০১৭ সালে সাভার ল্যাবরেটরি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ অর্জন করেন। কলেজে পড়ার সময়ও তিনি একাধিক সম্মাননা লাভ করেন। পরে চীন সরকারের বৃত্তি পেয়ে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান।
তারিকুলের এই অসামান্য অর্জনে তার পরিবার, এলাকাবাসী এবং শিক্ষকরা গর্বিত। অনেকে তার সফল ভবিষ্যৎ কামনায় দোয়া ও শুভকামনা জানিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে