রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভার মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামের গৃহবধূ দীপা রানী পাল (২২)। দুই যমজ সন্তানের জননী। ছয় বছরের সংসার জীবনে এমন করুণ পরিণতি কারও কল্পনাতেও ছিল না। এক রাতের মধ্যে সবকিছু পাল্টে গেল। কি ঘটেছিল সেই রাতে? কেনই বা দীপা আত্মহননের পথ বেছে নিলেন? ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিত হচ্ছে সেই জটিল রাতের কাহিনি।
বুধবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান দীপা। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর বৃহস্পতিবার ভোরে তিন যুবক তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়। তবে এরপর স্বস্তির বদলে নেমে আসে ভয়ংকর নিঃসঙ্গতা। কয়েক ঘণ্টা পর দীপাকে নিজ ঘরের সিলিংয়ের হুকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়—ওড়নায় ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি।
পরিবার বলছে, সিঙ্গাপুরপ্রবাসী স্বামী মিঠুন পালের সঙ্গে দীপার সংসার ছিল মোটামুটি সুখের। কিন্তু কখন যে ফেসবুকের মাধ্যমে স্থানীয় যুবক সাগর খানের সঙ্গে তার যোগাযোগ শুরু হয়, তা পরিবারের কারও জানা ছিল না।
ঘটনার রাতে সাগরের ডাকে সাড়া দিয়ে দীপা ঘর ছাড়েন। এরপরই ঘনিয়ে আসে রহস্য। অভিযোগ উঠেছে, সালাম, মাসুদ ও শাহাদাত নামের তিন যুবক দীপাকে সড়ক থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যান। তারা দীপার স্বামী মিঠুনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেয়ে দীপাকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে সাগরসহ পাঁচজন মিলে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
এই ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের পর ভোরে তাকে বাসায় ফেলে যায় অভিযুক্তরা। অপমান ও দুঃসহ যন্ত্রণায় দীপা আত্মহননের পথ বেছে নেন—এমনটাই ধারণা পুলিশের।
এদিকে, অভিযুক্ত প্রেমিক সাগর খানের পরিবারের দাবি, তাদের ছেলে দীপাকে অপহরণ করেনি। বরং ওই তিন যুবক সাগরকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয় ও দীপাকে তুলে নিয়ে যায়। দীপার মৃত্যুতে তারাও মর্মাহত।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় দীপার বাবা পাংশা মডেল থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে সাগর খান, সালাম, মাসুদ, শাহাদাতসহ আরও ২-৩ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, “মামলার পর আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছি। যেকোনো একজনকে গ্রেপ্তার করলেই পুরো ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।”
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে