চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের আব্দুল গাফফার আকাশ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। রোববার সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা পর্যন্ত উথলী রেলস্টেশনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনের সময় সকাল ৯টা ২০ মিনিটে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন উথলী রেলস্টেশনে পৌঁছালে অংশগ্রহণকারীরা ট্রেনের সামনে অবস্থান নেন। এতে ট্রেনটি প্রায় ৩০ মিনিট আটকে থাকে। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় ট্রেনটি গন্তব্যে রওনা দেয়।
উথলী ইউনিয়নবাসী ও নিহত আকাশের শোকসন্তপ্ত পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা দাবি করেন, আকাশকে পরিকল্পিতভাবে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। দাবি না মানলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সেনেরহুদা জান্নাতুল খাদরা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং নিহত আকাশের পিতা জিন্নাত আলী। এসময় তারা কপোতাক্ষ ট্রেনের পরিচালকের হাতে লিখিত অভিযোগপত্রও তুলে দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ মে চুয়াডাঙ্গা থেকে কপোতাক্ষ ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার পথে জয়রামপুর আখ সেন্টারের কাছে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় আকাশের (২৬) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে ঘটনাটি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয় এবং উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, টিকিট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে কপোতাক্ষ ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে দায়িত্বরত টিটিই, রেলওয়ে পুলিশ এবং এটেনডেন্টরা মিলে আকাশকে মারধর করে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন। এ ঘটনায় নিহত আকাশের বাবা জিন্নাত আলী ২১ মে চুয়াডাঙ্গা আদালতে ৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন—টিটিই লালন চক্রবর্তী (৪২), রেলওয়ে পুলিশের এসআই পারভেজ (৩৬), কনস্টেবল কাদের (৪০), এটেনডেন্ট মিলন (৩৭) ও সোহাগ মিয়া (৩৬)। মামলায় চারজন প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীর কল রেকর্ডও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তিনি বলেন, “আমরা ৭১ নম্বর সিটে বসে ছিলাম। দেখি লাল গেঞ্জি পরা এক যুবককে কয়েকজন দরজার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মাথা নিচের দিকে পড়ে যেতে দেখি। ঘটনাস্থলে দুজন পুলিশও ছিল, তারাও কিছু বলেনি।”
নিহত আকাশ ছিলেন জীবননগরের সেনেরহুদা গ্রামের বাসিন্দা এবং চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অফিস সহকারী পদে কর্মরত। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
এলাকাবাসী ও পরিবারের দাবি, আকাশ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে। তারা প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একুশে সংবাদ / চু.প্র/এ.জে