শৈশব থেকে বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করে পড়াশোনা করেছেন জসিম উদ্দিন। অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করে একদিন উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। অবশেষে সেই স্বপ্নের একধাপ কাছে পৌঁছেছেন তিনি—জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু ভর্তি হতে না পারার শঙ্কা এখন তার সামনে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চোচপাড়া বুরাবাড়ি গ্রামের দিনমজুর তসলিম উদ্দীনের ছেলে জসিম উদ্দিন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘ডি’ ইউনিটে তিনি ৪৪৭তম মেধাক্রমে স্থান পেয়েছেন। ভর্তি কার্যক্রমের শেষ তারিখ ২০ মে। অথচ প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তার ভর্তিটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জসিম জানান, “প্রশাসনিক ক্যাডারে গিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এত কষ্ট করে আজ যেখানে পৌঁছেছি, সেখান থেকে শুধু টাকার জন্য ফিরে যাওয়া খুব কষ্টকর।”
জসিমের বাবা তসলিম উদ্দিন বলেন, “স্কুল-কলেজে একটু একটু করে খরচ মিটিয়ে ছেলেকে পড়িয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির খরচ, ঢাকা শহরে থাকা ও খাওয়ার খরচ মেটানো আমার পক্ষে সম্ভব না। ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই।”
জসিম বড়পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঠাকুরগাঁওয়ের সমিরউদ্দীন স্মৃতি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে তার শিক্ষাজীবন সবসময়ই অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ পাল বলেন, “জসিম খুব মেধাবী ছাত্র। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে সহায়তা করতে। সমাজের অন্যরাও এগিয়ে এলে ছেলেটির ভবিষ্যৎ বদলে যেতে পারে।”
এদিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ জানান, “জসিমের বিষয়টি শুনেছি। প্রশাসনিকভাবে আমরা যথাসম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করবো।”
অসহায় এ মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান মানুষদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জসিমের পরিবার ও শিক্ষকরা।
একুশে সংবাদ/ঠা.প্র/এ.জে