AB Bank
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

গরুর মতো বেধে পিটিয়েছে, বাবা ডেকেও রক্ষা পায়নি


Ekushey Sangbad
নাজমুল করিম, সাভার, ঢাকা
১১:১৬ এএম, ১০ মার্চ, ২০২৪
গরুর মতো বেধে পিটিয়েছে, বাবা ডেকেও রক্ষা পায়নি

কোরবানির গরুর মতো বেধে মারছে। রক্ষা পেতে কান্নাকাটি করছে। বাবা ডাকছে। তাও ছাড়ে নাই। মারে আর বলে, স্বীকার কর চুরি করছস। স্বীকার না করায় আরও বেশি মারছে,’ ঢাকার ধামরাইয়ে মো. হাসেম আলী (৩৯) নামে এক নির্মাণ ঠিকাদারকে বর্বর নির্যাতনের এমন বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি।

গত ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের বড় চন্দ্রাইল এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের বাড়িতে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। আহত ওই ঠিকাদারকে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন তিনি।

আহত মো. হাসেম ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা এলাকার বাসিন্দা। 

ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, কুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান ও তার দুই ছেলেসহ স্থানীয় কয়েকজন তাকে মারধর করে।

আহত হাসেমের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাদের বাড়ির একটি জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে লুৎফর রহমানের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিবাদেও জড়িয়েছেন তারা। এতে পরিবারটির ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন লুৎফর রহমান। গত কিছু দিন ধরে চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন স্থানীয় আব্দুল বারেক নামে এক ব্যক্তির পাঁচ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ করছিলেন হাসেম। গত ৫ মার্চ এই ভবনের তিন তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজের ১ লাখ টাকা বিল পান তিনি। টাকা নিয়ে বাড়ির ফেরার সময় তাকে আটক করে চেয়ারম্যানের লোকজন। বিষয়টি শুনে বারেকের ছেলে মো. হারেছুল ইসলাম তাকে ছাড়াতে যায়। তখন চেয়ারম্যান হারেছের কাছ থেকে তাকে টেনে নিজের বাড়ি নিয়ে গেট আটকে দেয়। সেখানেই হাসেমকে নির্যাতন করা হয়। 

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে স্থানীয় আনোয়ারের বাড়ির কাছে চোর চোর বলে চিৎকার শুনতে পান তারা। বাড়ির কাছো গিয়ে দেখেন হাসেমকে কয়েকজন চড়থাপ্পড় দিচ্ছে। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বারেকের ছেলে হারেছ। তিনি সেখানে গিয়ে কি হয়েছে জানতে চান ও হাসেমসহ অন্যদের নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা দেন। চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বের হয়ে হারেছের কাছ থেকে হাসেমকে জোর করে টেনে তার বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায় ও গেট আটকে দেয়। এ সময় আরও কয়েকজন ভেতরে প্রবেশ করে। এর কিছুক্ষণ বাড়ির ভেতর থেকে হাসেমের চিৎকার শুনতে পান তারা। 

আহত হাসেমের বরাত দিয়ে তার ভাই মো. জাহের আলী জানান, বাড়িতে নিয়ে উঠানের মেঝেতে ফেলে তাকে পা দিয়ে মুখ চেপে ধরেন লুৎফর রহমান। আর তার দুই ছেলে প্লাস্টিকের রশি দিয়ে হাসেমকে পিছমোড়া করে বেধে ফেলে। এরপর টানা আধা ঘণ্টা ধরে মারধর করা হয় তাকে।

জাহের আলী বলেন, মারধরে হাসেমের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে আমাদের জানায়। জানতে পেরে আমরা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশের সহযোগীতা চাই। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পুলিশ এসে বাড়িতে ঢুকে পুলিশের এসআই অসীম বিশ্বাস হাসেমকে মারধর করতে দেখে তাকে উদ্ধার করে। 

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে আমরা থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করেছি। বিষয়টি তাকে জানিয়েছি। তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে রবিবার সকাল ১০টায় যেতে বলেছেন। 

হারেছুল ইসলাম জানান, রাতে আনোয়ারের বাড়ির দিকে চোর চোর শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি হাসেমকে লোকজন ধরে চড়থাপ্পড় দিচ্ছে। বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ে হাসেমসহ অন্যদের নিয়ে আমার বাড়ির দিকে আসতে থাকি। এ সময় চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে এলে চেয়ারম্যান তাকে আমার হাত থেকে টেনে তার বাড়িতে নিয়ে যায় ও গেট বন্ধ করে দেয়। বাড়ির ভেতর তাকে মারধরে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে তাকে চেয়ারম্যান পা দিয়ে মুখ চেপে ধরে ও তার ছেলেরা হাসেমকে পিছমোড়া করে বেধে ফেলে। এরপর হাসেমকে তারাসহ আরও কয়েকজন মারতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ঘটনার সময় আমি চেয়ারম্যানের বাড়ির ভেতরে ছিলাম। দেখি চেয়ারম্যান উঠানের পাকা জায়গায় হাসেমের মুখ পা দিয়ে চেপে ধরে আছে। চেয়ারম্যানের ছেলে হাসেমকে রশি দিয়ে বাধে। প্রথমে দুই পা ভাজ করে বাধে। এরপর দুই হাত পায়ের সঙ্গে বেধে কোরবানির গরুর মতো বেধে ফেলে। এরপর মোটা পাইপ দিয়ে পেটাতে থাকে। হাসেম চিৎকার করে ছেড়ে দিতে বলে। পুলিশ আসার আগপর্যন্ত তাকে এভাবেই পেটাতে থাকে। এ সময় রক্ষা পেতে কান্নাকাটি ও চিৎকার করলেও রক্ষা মেলেনি। 

ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অসীম বিশ্বাস বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় জরুরি যোগাযোগ নম্বর ৯৯৯ এ কল পেয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে চোর সন্দেহে একজনকে মারধর করা হচ্ছে শুনে ঘটনাস্থলে যাই। স্থানীয় জনতা হাসেমকে মারধর করেছে বলে চেয়ারম্যান জানান। পুলিশের কাছে না দিয়ে মারধর করা অন্যায় হয়েছে বলে তাদের জানিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। সেখানে হাসেমের ভাই উপস্থিত ছিল। তিনি আমাকে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হবে বলে জানান। এরপর আমি থানায় চলে আসি। আমি তাদের উভয়কে বলেছি, কারো কোনো অভিযোগ থাকলে থানায় এসে অভিযোগ জানাতে।

ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া এক নারীর বাসায় চুরি করার সময় স্থানীয়রা তাকে দেখে ফেলে। চোর চোর বলে তাকে ধরতে উদ্যত হলে সে পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাকে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। ধরার পর তাকে জনতা চড়থাপ্পড় দেয়। এরপর চেয়ারম্যান তাকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর আমি আর সেখানে ছিলাম না। কি হয়েছে জানি না।

কুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, একটি বাড়িতে চুরি করতে গেলে স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া দিয়ে আটক করে মারধর করে। পরে চৌকিদাররা উদ্ধার করে তাকে আমার বাসায় নিয়ে আসে। আমি থানায় ফোন করে বিষয়টি ওসি সাহেবকে জানাই। পুলিশ এসে তাকে হেফাজতে নেয়। 

নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, না, এখানে কোনো মারধর করা হয়নি।

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, উভয়পক্ষকে রবিবার (১০ মার্চ) সকালে আসতে বলা হয়েছে। এরপর তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

একুশে সংবাদ/এস কে

Link copied!