নেত্রকোনার মদনে অনাবাদি জমিতে শাক-সবজিসহ রবিশস্য চাষ করে ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন মদন উপজেলার চাষীরা। স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় দীর্ঘদিনের অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনার এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলে শুকনো মৌসুমে যেসব জমি বিরান ভূমিতে পরিণত হতো- সেসব জমিতে এখন ফলছে মিষ্টি কুমড়া, ক্ষিরা, শসা, চিনাবাদাম, আলু, কপি, সূর্যমুখি, সরিষাসহ নানা জাতের রবিশস্য। ফলনও হয়েছে বাম্পার।
মদন উপজেলা সাধারণত এক ফসলি এলাকা হিসেবে পরিচিত। বোরো ছাড়া আর কোন ফসল তেমন হয় না এখানে। সচরাচর শাক-সবজি বা অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ করতে দেখা যায় না। কিন্তু হাওর অধ্যুষিত এলাকা মদন উপজেলা কৃষি অফিসে কৃষিবিদ হাবিবুর রহমানের যোগদানের পর থেকেই ঘটেছে ব্যতিক্রম। দিগন্ত বিস্তৃত ধান খেতের ভিড়ে দেখা মিলছে অসংখ্য রবিশস্য বা সবজির খেত, যা নজর কারছে অনেকের।
মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব অনাবাদি জমি চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এবার মদন উপজেলা ৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে, এছাড়াও , ক্ষিরা, শসা, চিনাবাদাম, আলু, সূর্যমুখি, সরিষা, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, মাশকলাই ও গমসহ নানা জাতের রবিশস্য আবাদ করা হয়েছে। সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার, প্রায়’৫০ হেক্টর জমিতে। যার বাজার মূল্য ধরা হচ্ছে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা। সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১০ মেট্রিক টন। বিক্রয়মূল্য আসতে পারে প্রায় ৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন জাতের আলো প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা মত উৎপাদন হবে।
বিভিন্ন শাকসবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকার, গমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ লক্ষ টাকা, মরিচ ,পেঁয়াজ, রসুন, মিলে প্রায় ২কোটি টাকার মতো উৎপাদন হবে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এর পরিমাণ বিভিন্ন সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস। প্রতিটি শস্যের খুব ভাল ফলন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষি কর্মকর্তা ও চাষীরা।
চাষীরা জানান, উৎপাদিত সবজি ও শস্য এলাকার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকা, নেত্রকোনা, ও কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য জেলাতেও সরবরাহ করা হচ্ছে। পাইকাররা সরাসরি চাষীদের খেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
চাষীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি জমি কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের মাধ্যমে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। চাষীদের ক্ষতির বালাইনাশকের বদলে প্রাকৃতিক বালাইনাশক পদ্ধতি ও জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তিয়শ্রী গ্রামের কৃষক শেখ নজরুল ইসলাম জানান, তারা দুই জনে মিলে ৮০শতক পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। জাওলা গ্রামের কৃষক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন আমি ৪০০শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি।বোরো ফসল তুলতে গিয়ে প্রায় বছর আগাম বন্যার (পাহাড়ী ঢলের) ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু সবজি চাষে ঝুঁকি কম। এছাড়া ধানের তুলনায় লাভও বেশি’।
মদন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মৌরী তানিয়া মৌ বলেন হাওড়ের চাষীরা সাধারণত ধান চাষে আগ্রহী। কিন্তু রবিশস্য চাষের জন্য হাওড়ের জমি খুবই উপযোগী। কারণ এখানে প্রতিবছর বর্ষায় পলির স্তর পড়ে। পলি জমির উর্বরতা বাড়ায়। তাই হাওড়ের জমিতে তেমন সার দিতে হয় না। জৈব সারেই ভাল ফলন পাওয়া যায়।
একুশে সংবাদ.কম/সা.খ.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :